নড়াইলে এক পুলিশ কনস্টবলের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ওঠায় দুটি পরিবার ও তাদের সন্তানরা এখন অসহায় জীবন-যাপন করছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং মামলাও হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টবলকে ফাঁড়িতে ক্লোজড এবং বিভাগীয় মামলা করা হলেও থামছে না বরং নিজের দু’সন্তানের খোঁজ-খবর না নিয়ে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে।লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নড়াইল সদরের শাহবাদ ইউনিয়নের নারানপুর গ্রামের সামছুল আলমের পুত্র পুলিশ কনস্টেবল মহিদুল আলমের সাথে রতডাঙ্গা গ্রামের ইকরামুল হকের কন্যা মিশরী খানমের বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে স্বামী বিভিন্ন সময় মিশরীর কাছে যৌতুক দাবি করে। মিশরীর বাবা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা এবং স্বর্ণালংকার বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা প্রদান করেছেন। বর্তমানে ১১ বছরের এক কন্যা ও ৬ বছরের শিশু পুত্র রয়েছে। সম্প্রতি যশোরের শার্শা থানাধীন বাগআচড়া ফাঁড়িতে চাকরি করাকালীন সময়ে কনস্টেবল মহিদুল আলম সুমি খানম (৩৫) নামে এক বিবাহিতা নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। গত ৩ জানুয়ারি কনস্টেবল মহিদুল ও সুমিকে আপত্তিকর অবস্থায় নিজ বাড়িতে হাতেনাতে সুমীর স্বামী ইকবাল হোসেন ধরে ফেলে এবং ছবি তুলে রাখে। পরে শার্শার ব্রাকের মাঠকর্মী ইকবাল সেই ছবি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করে এ ঘটনার বিচার দাবি করলে ৯ জানুয়ারি এ ঘটনায় কনস্টেবল মহিদুলকে বাগআচড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ক্লোজড করা হয় এবং ২ ফেব্রুয়ারি মহিদুলের বিরুদ্ধে যশোর পুলিশের রিজার্ভ অফিস বিভাগীয় মামলা করে । সুমীর স্বামী ইকবাল হোসেন গত ৯ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপারের (নাভারন সার্কেল, যশোর) কাছে এক লিখিত অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল মহিদুলের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন এবং তার স্ত্রী সুমিকে ফেরত চান। মিশরী খানম অভিযোগে জানান, স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের পর থেকে স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করছি। স্বামী আমাদের কোন খোঁজ খবরতো রাখেইনি উল্টো ২০মার্চ দেবর সোহাগ খান মারধর করে এ ব্যাপারে কোন কথা না বলতে। ক্লোজড থাকা অবস্থায় স্বামী গত ৪ এপ্রিল স্ত্রী-সন্তানের অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে আমাকে কাবিননামায় স্বাক্ষরের জন্য চাপ দেয়। এতে সই না করায় বেদম মারধর করে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ৬ এপ্রিল মিশরী খানম নড়াইলের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের এবং ৮এপিল স্বামী পুলিশ কনস্টেবল মহিদুল, তার ভাই সোহাগ খান ও প্রেমিকা সুমি খানমের বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলা করি। সর্বশেষ নিজের ও সন্তানের জীবনের ঝুঁকি থাকায় গত বুধবার (২জুন) নড়াইল সদর থানায় ডায়েরী করি। তিনি জানান, আগামী ৮ জুন যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার স্যারের অফিসে স্বামী মহিদুল আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান অনুষ্ঠিত হবে। তার আশা তিনি সঠিক বিচার পাবেন। কনস্টেবল মহিদুল আলমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ হলে তিনি স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কথা অস্বীকার করে বলেন স্ত্রীতো তার বাড়িতেই আছে। বাড়িতে সাংসারিক খরচ পাঠনো হচ্ছে। সে আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা করেছে তার কাছেই জিজ্ঞসা করেন। নড়াইল সদর থানায় সদ্য যোগদানকারী ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর ডায়েরী প্রসঙ্গে বলেন, এটা যাচাই বাছাই করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া পুলিশের বিভাগীয় মামলার তদন্ত সঠিক নিয়মেই চলবে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।