এলজিইডির লোহাগড়া উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সেতুতে মোট ৯টি গার্ডার নির্মাণ করতে হবে। তার ২টি গার্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় পাশেই লাগোয়া বাড়িঘর। একেকটি গার্ডারের উচ্চতা ছিল এক হাজার ৫০০ মিলি মিটার। ওই উচ্চতায় সেতু নির্মাণ হলে বাড়ি ঘরের ওপর দিয়ে সেতু চলে যাবে, বাড়িঘর ভাঙা পড়বে। তাই গার্ডারের উচ্চতা কমিয়ে এক হাজার ৩০০ মিলি মিটার করা হয়েছে। ওই নকশা পরিবর্তন করতে গিয়ে সেতুর কাজ পিছিয়ে গেছে। এ দিকে, সংযোগ সড়কের কাজ করা যাচ্ছে না। কারণ সংযোগ সড়কের পাশ ঘেষে ড্রেন রয়েছে। মাটি কাটলে ওই ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সংযোগ সড়কের নকশাও পরিবর্তন করতে হবে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণস্থলে বালু দিয়ে খাল ভরাট করা হয়েছে। সেখানে সেতুর পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি গার্ডার নির্মাণ হয়েছে। সংযোগ সড়কের কোনো কাজই হয়নি। সেতুর পশ্চিম পাড়ে নির্মাণ সামগ্রী ফেলানো আছে। সেখানে আব্দুল হাই ও সবুজ নামে দুজন শ্রমিক সেতুটির রডের কাজ করছেন। প্রধান মিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঢাকা থেকে এলজিইডির বিশেষজ্ঞ দল এসে গার্ডারের মান পরীক্ষা করছেন।
শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণে চারটি ধাপে কাজ হবে। প্রথম ধাপে পিলার নির্মাণ, সেটি শেষ হয়েছে। পরের ধাপে ৯টি গার্ডারের মধ্যে ২টি গার্ডার নির্মাণ শেষ হয়েছে। আরো দুটির কাজ শুরু হয়েছে। গার্ডার নির্মাণ শেষ হলে ছাদের কাজ হবে। এ ছাড়া সংযোগ সড়ক করতে হবে।
নির্মাণ কাজের শ্রমিকেরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, গত ১০ দিন ধরে শ্রমিকেরা বসে আছেন। ঢাকার এলজিইডির বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের নির্দেশনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাঝে প্রায় ছয় মাস কাজ একেবারে বন্ধ ছিল। এরপর কাজ হচ্ছে টুকটাক। এত বড় সেতু, অথচ ৩-৪ জন মাত্র শ্রমিক কাজ করে। কাজে অগ্রগতি নেই। এখানে একটি কাঠের সেতু আছে। তার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলাচল করত। ওই সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় পূর্ব পাড়ে কাঠের সেতুর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এ সেতুর পূর্ব পাড়ে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা কলেজপাড়া ও পোদ্দারপাড়া। এ পাড়ে লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজ, লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোহাগড়া বাজার, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, আটটি ব্যাংক ও পোস্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পশ্চিমপাড়ে ছাতড়া, কেষ্টপুর ও নারায়ণদিয়া গ্রাম এবং ছাতড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এ সেতু না থাকায় প্রায় সাত কিলোমিটার ঘুরে এ এলাকার বাসিন্দাদের চলাচল করতে হয়। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভোগান্তি হয় রোগীদের।
ঠিকাদার সঞ্জিবন সাহা বলেন, ‘ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এ ধরনের কাজ শেষ করতে দুই মৌসুম তথা দুই বছর লাগে। খাল থেকে পাইলিংস্থলে বালু ভরাট করা হচ্ছিল। সেখানে বাধা আসে, তাই ছয় মাস দেরি হয়ে গেছে। জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।’
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ঢাকা থেকে এলজিইডির বিশেষজ্ঞ দল এসে না দেখলে কাজ করা যায় না। আরো সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ সেতুটি হচ্ছে। ওই মুল প্রকল্পই সামনে জুনে শেষ হয়ে যাবে। তাই এ সেতু জুনের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে হবে। কিন্তু মূল সেতু শেষ করা হয়তো যাবে, তবে সংযোগ সড়ক নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।