সমাজের কন্ঠ ডেস্ক – পাবনায় গ্রামবাসীর দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করতে যেয়ে থানা ‘ওসি‘ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।সুত্রে জানা যায়, পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় একটি গ্রামের দুগ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে যেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে থানার ওসি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
গত ২১শে মে মঙ্গলবার বিকালে থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ওসি ওবায়দুর রহমানের। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মকছুদপুর উপজেলায়। তিনি গত বছরের ২৮ অক্টোবর ফরিদপুর থানায় যোগদান করেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বিলচান্দক গ্রামে গত তিন দিন ধরে বিবাদমান দু’টি গ্রুপের বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও লুটপাট চলছিল। সোমবার দিনভর সেখানে এক পক্ষ অপর পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
গত দু’দিন ধরে ফরিদপুর থানার ওসি ওবায়দুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেই বিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এই বিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ওসি সোমবার ওই এলাকায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করে তিনি কমিউনিটি পুলিশিং, স্থানীয় নেতারা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বুধবার সেখানে একটি মীমাংসা বৈঠকের আয়োজন করেন।
কিন্ত সেই মীমাংসা বৈঠকের আগেই মঙ্গলবার বিকালে থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় ওসি ওবায়দুর রহমান হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
মৃত্যুর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, এলাকার রহমত প্রামাণিক ও আনসার আলী আকন্দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছে। এরই একপর্যায়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।
ওসি জানান, এর জের ধরে রহমত প্রামাণিকের সমর্থক এনামুল হকের নেতৃত্বে ২০-২৫ ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে রাত ৯টার সময়ে প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য বাবুল আক্তার,আনসার আকন্দ, শামীম রেজা, এলাহী সরকার,রুহুল আমিন, রবিউল করিম, এনামুল হক ও মুক্তিযোদ্ধা রহিম মণ্ডলের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা, টিভি, ফ্রিজ, আসবাপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এতে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য বাবুল আক্তার বাদী হয়ে ৬৮ জনকে আসামি করে মামলা করলে পুলিশ মামলার আসামি রহমত প্রামাণিক (৬০), আব্দুল মালেক প্রামাণিক (৩০), আলাউদ্দিন আলী (৪৫) ও মুকুল হোসেনকে (৩২) গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
ওসি আরো জানান, রহমত গংরা ১৮ ফেব্রুয়ারি পাবনা কোর্টে জামিন নিতে গেলে বাবুল আক্তার ও আনসার আকন্দের লোকজন সকাল ১০টার সময় রহমত আলীর পক্ষের শফিকুল, আলম হোসেন ও নান্নুর বাড়িঘরসহ ১০-১২টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ খবর পেয়ে রহমত আলীর লোকজন সোমবার বিকাল ৫টার দিকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আত্মীয়স্বজনসহ ৫০-৬০ জন লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামে গিয়ে এলোপাতাড়ি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লোকজনকে মারপিট শুরু করলে বাবুল আক্তারের পক্ষের শতাধিক মহিলা তাদের বাড়িঘর ফেলে অন্য গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বর্তমান গ্রামে লোকজন প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে।
ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, এলাকায় একবার মীমাংসা করে দিয়ে আসার পর আবারও তারা বিবাদে লিপ্ত হয়। এ অবস্থায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং স্থায়ী মীমাংসার জন্য বুধবার সকালে কমিউনিটি পুলিশিং, স্থানীয় নেতারা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সেখানে একটি মীমাংসা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে ওই মীমাংসা বৈঠকের আগেই মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় ওসি ওবায়দুর রহমান হার্ট অ্যাটকে মারা যান।
পুলিশের চাটমোহর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএএম ফজল ই খুদা জানান, সোমবার বিলচান্দক গ্রামে বিবদমান দুই গ্রুপের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেখানে পুলিশ মোতায়েনের পর মঙ্গলবার সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হলে ওসি আর সেখানে যাননি। কিন্ত ওসি ওবায়দুর রহমান মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
সন্ধ্যায় ওসির লাশ পাবনা পুলিশ লাইনসে আনা হয়েছে। সেখানে রাতে প্রথম জানাজা শেষে তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় গ্রামে বাড়িতে পাঠানো হবে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সূত্রঃ যুগান্তর