রেল লাইন বসানোর আগে পদ্মা সেতু চালুর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি নইতো?

0
0

ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ পদ্মা সেতুর অংশে রেললাইন পাকাপাকি ভাবে বসানোর আগে পদ্মা সেতু চালু করলে বহুমুখি পদ্মা সেতুর  বড় রকমের ক্ষতি করা হচ্ছে না তো?

দেশের এবং পদ্মা সেতুর এত বড় এবং বিশাল ক্ষতি করবেন না।

পদ্মা সেতুর নীচের (Lower deck) অংশে –

পাথর বিহীন রেল লাইন
(পদ্মা মূল সেতু অংশের রেলের সকল RCC Sleeper & rail bed যৌথ ভাবে ঢালাই করে)
সমাপ্ত করার পরই –
পদ্মা সেতুতে (Upper deck এ) – সড়ক চলাচল এর জন্য খোলা উচিৎ – তার আগে না!
কিছু অর্বাচিন বলছে ২৫ জুন মাসে (পারলে তারও আগেই) পদ্মা সেতুতে (Upper deck এ) – যানবাহন চলাচল শুরু করে দেয়া উচিৎ!

উনারা কি ভাবে এবং কেন বলছেন বুঝি না ৷

পদ্মা সেতুর নীচ তলায় (Lower deck এ) পাথর বিহীন রেল লাইন এর জন্য – রেল লাইনের সকল RCC Sleeper & RCC rail bed যৌথ ভাবে – (RC Concrete) ঢালাই করে এটি পুরোপুরি শক্তি অর্জন করার অর্থাৎ মজবুত হওয়ার আগেই –
পদ্মা সেতুর উপরের অংশে (Upper deck এ) যানবাহন চলাচলের আগামী জুন মাসেই খুলে দেওয়ার জন্য বার বার বলে যাচ্ছেন, লিখে যাচ্ছেন এবং সরকারের উপর একটি মনস্থাতাত্ত্বিক চাপ সৃৃৃৃৃৃষ্টি করে যাচ্ছেন –
তাদের বক্তব্য – কারিগরি ভাবে যেমন সঠিক নয় – তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও এটি যৌক্তিকও নয়!
বরঞ্ছ এটি হবে একটি চরম আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত!

কারন, বর্তমানে মূল পদ্মা সেতুতে একটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ
(যা অন্য ঠিকাদারের কাজ, পদ্মা মূল সেতুর ঠিকাদারের কাজ নয়)
এখনো বাকী (এমনকি যা শুরুই হয় নাই)!

সেটি হচ্ছে —
পদ্মা সেতুর মূল সেতুর অংশে—
নীচ তলায় (Lower deck এ) পাথর বিহীন রেল লাইন এর জন্য –
রেল লাইনের সকল RCC Sleeper এবং RCC rail bed যৌথ ভাবে
(সংযুক্ত ছবিটি দেখুন) –
RC Concrete ঢালাই করা এবং এটি পুরোপুরি “শক্ত” হয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করা/হওয়া তো দুরের কথা –
ঐ কাজ শুরুই হই নাই!

Concrete ঢালাই এর পর পুরোপুরি শক্তি অর্জন করতে এবং এর উপর অন্য কাজের জন্য “fit” (উপযোগী) হতে –
সাধারনত শেষ ঢালাই এর দিন থেকে ১৪ দিন ( বিশেষ Admixture ব্যবহার করে তা ১০ দিন) পর্যন্ত “সময়” ধরা হয়!

এই অতীব গুরুত্ত্ব পূর্ণ কাজটি এখনো শুরুই হয় নাই!

এই অত্যান্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজটি –
যদি পদ্মা সেতুর উপরের অংশে (Upper deck এ ) যানবাহন চলাচল শুরুর পর করা হয় তবে –
রেল লাইনের জন্য সেই RCC Sleeper এবং RCC rail bed টি যথাযথ ভাবে তৈরি বা নির্মাণ করা যাবে না!

সেতুর উপরের অংশে যানবাহন চলাচলের জন্য – পুরো সেতুতে সৃষ্ট কম্পন (vibration) এর কারনে –
(১) পদ্মা মূল সেতুর নীচের অংশে ঢালাই করা RCC rail bed এ সুক্ষ (Hairline crack) থেকে বড় মাপের ফাটল (Large crack) দেখা দিবে,

(২) ‘রড’ (Reinforcement) এর সাথে ঢালাই (RC Concrete ) এর শক্ত বন্ধন (Bond) ঢিলা হয়ে –ফলে রেল লাইনের ভিত্তি (যার উপর রেল লাইন Clip দিয়ে আটকিয়ে স্থাপন করা হবে) structurally খুব দুর্বল এবং নড়বড়ে হয়ে যাবে!

(৩) তখন ১২০ কি মি Design speed এ রেল গাড়ী চলাচল তো দুরের কথা – ৪০- ৫০ কি মি speed এ রেল গাড়ী চলাচল করলেও –
তা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং রেল গাড়ী laterally এপাশ ওপাশ হয়ে চলচল করে যাত্রীদের মন আতঙ্কের সৃষ্টি হবে (এবং তখন যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুর মত ১৫ কিলো মিটার বা তার কম বেগে ট্রেন চালাতে হবে)

(৪) কিছুদিন পরে ঐ সব ছোট বড় সব ফাটল (cracks) গুলি আরও বড় হয়ে – রেল লাইনটি ট্রেন চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে যাবে!

(৫) এছাড়াও রেল লাইনে আরও অনেক চিরস্থায়ী কারিগরি Operational ও Maintenance সমস্যার সৃষ্টি হবে!

কারিগরি (Engineering) ভাবে RC Concrete বা সাধারন Plain Concrete ও ঢালাই শুরুর পর ১ থেকে বড় জোর আড়াই ঘন্টা (তাও কিছু বিশেষ Concrete admixture মিশিয়ে) –
যাকে Engineering বা কারিগরি ভাষায় Initial setting time বলে!
সেই সময় পর্যন্ত কাঁচা Concrete এ নাড়াচড়া করা যায় বা Concrete এ কোন প্রকার Vibration হলেও—
Concrete এর Strength & others কোন ক্ষতি হয় না!

কিন্তু এই Initial setting time এর পর থেকে সেই Concrete পুরপুরি শক্ত বা harden হয়ে (পানি দিয়ে curing করে) full design strength অর্জন করতে সাধারনত ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে!

এই ১০ দিনের পূর্বে ঢালাই করা ঐ Concrete এ কোন প্রকার –
এমনকি – ছোট থেকে মাঝারি মাপের এবং ক্রমাগত কম্পন বা vibration
( যা পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হলেই হবে) হলে
(১) Concrete এ ছোট বড় ফাটল (Hairline থেকে বড় crack) সৃষ্টি হয়ে

(২) ‘রড’ (Reinforcement) এর সাথে ঢালাই (RC Concrete ) এর শক্ত বন্ধন (Bond) ঢিলা হয়ে –
ঐ RC Concrete এর পাথর বিহীন রেল লাইন এর RCC bed এর কাঙ্খিত শক্তি তো দুরের কথা – তেমন কোন শক্তিই পাওয়া যাবে না এবং

(৩) সেই RC Concrete এর উপর নিয়মিত ভারী রেল ইঞ্জন সহ মাল বাহী ও যাত্রী বাহী ট্রেন চলাচল শুরু করলে – কয়েক মাসের মধ্যেই – ঐ ফাটল গুলি বড় হয় – RC Concrete টি ভেঙ্গে বড় বড় টুকরা হতে শুরু করবে!

(৪) যার ফলে ঐ রেল লাই্নে ভারী Broad gauge রেল ইঞ্জন সহ মাল বাহী ও যাত্রী বাহী ট্রেন চলাচল এর একদম অনুপযোগী হয়ে যাবে!

তাই এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ (Vital & important ) কাজটি পুরোপুরি শেষ ( ৪ থেকে ৬ মাস লাগতে পারে) না করে –

পদ্মা সেতুর উপরের অংশে (Upper deck এ ) যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে ––
মূল পদ্মা সেতুর উপর প্রস্তাবিত পাথর বিহীন রেল লাইনটি structurally খুব দুর্বল হয়ে ধীরে ধীরে একেবারে অকার্যকর হওয়ার সম্ভবনা আছে!

তাহলে আমাদের দেশের –
বিশেষ করে এই মুল্যবান এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতুর বিশাল ক্ষতি হবে!!

আমরা এর থেকে কাঙ্খিত সুবিধা এবং ফল তো পাবই না –
বরঞ্চ তা সঠিক করে পুনর্নির্মাণ করতে পরবর্তীতে
২ থে ৩ গুন সময় লাগবে এবং ৫ থেকে ১০ গুন বেশী অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে!!

তখন পদ্মা সেতুতে সড়ক পরিবহন এবং রেল পরিবহন – দুটোই -পুরোপুরি বন্ধ করে এই কারিগরি ত্রুটি দূর করতে হবে!

এছাড়া,
পদ্মা সেতু প্রকল্পের – মূল সেতুর আরও অনেক ছোট খাট সহ আরও অনেক কাজ বাকী!
(নদী শাসনের, যা ভিন্ন ঠিকাদারের কাজ, এখনো অনেক কাজ বাকী!

তবে – এটি পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের সাথে প্রত্যক্ষ্য ভাবে জড়িত না!)

তাই,
মূল সেতু নির্মাণের Contract বা “চুক্তি” অনুযায়ী –

পদ্মা মূল সেতুর ঠিকাদার –
তার পুরো প্রকল্পের “সকল কাজ” (এবং পুরো Site clearing, demobilization ইত্যাদি সহ ছোট বড় সকল আনুসাঙ্গিক কাজ) ভাল ভাবে এবং চুক্তি অনুসারে করে –

Client বা তার নির্বাচিত প্রতিনিধি Consultant & Technical Expert committee এর কাছে – Client এর সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি এবং চুক্তি (Contract) মোতাবেক ১০০% কাজ সমাপ্ত করেই –
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে “oficially” হস্তান্তর করতে হবে!

এটিই হবে আসল “Hand Over date”!

এই আসল “Hand Over date” এর সাথে ঠিকাদারের অনেক অর্থনৈতিক দায় দায়িত্ত্ব জড়িত আছে!

তাই ঠিকাদাররাও চায় –
তার অর্থনৈতিক দায় (Penalty) কমাতে
(নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল কাজ শেষ করতে দেরী হলে – চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারকে যে পরিমান দৈনিক জরিমান দিতে হত – তা থেকে বাঁচতে) –
কোন আবেগী উছিলা দেখিয়ে –
প্রকল্পের পুরো কাজ এবং সকল কাজ (৯৯%) ভালভাবে না সম্পন্ন না করেই –
তার অনেক আগেই – প্রকল্প “semi officially” হস্তান্তর করতে!

দুঃখ জনক হলেও সত্য যে – ভাল পরিমান অর্থ ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে –
মুল ঠিকাদারের এই অন্যায় এবং দেশ বিরোধী কাজে সায় দেয় দেশী বিদেশী Consultant সহ সেতুর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জরিত সরকারের দুর্নীতিবাজ, দেশের স্বার্থ বিরোধী কিছু আমলা ও প্রকৌশলী!
একই অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়ে এতে যোগ দেয় কিছু মিডিয়া এবং তথা কথিত নিরেপেক্ষ সুশীল!
কিছু লোকের আবেগী বক্তব্যের কারনে এবং সরকারের উপর অনৈতিক মনস্থাতাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে –
পদ্মা মূল সেতুতে রেল লাইনের কাজ শেষ না করে –

সেতুতে (কম বা সীমিত গতিতেও এবং বা শুধু দিনের বেলায়) যান বাহন চলাচল এর জন্য খুলে দিলে –

উপরে বর্ণিত এই সব জটিল কারিগরি এবং নানাবিধ সমস্যাগুলি দূর করতে বা ঠিক করতে –
আবার এই মূল পদ্মা সেতুর উপর প্রস্তাবিত পাথর বিহীন রেল লাইনটি ভেঙ্গে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে!

তখন পদ্মা সেতুর উপরের অংশে যেমন সকল যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে এবং নীচে রেল চলাচলও বন্ধ রাখতে হবে – প্রায় ৬ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত!
পদ্মা সেতুর মূল সেতু অংশের নীচ তলায় –
সকল RCC Sleeper & rail bed যৌথ ভাবে ঢালাই করে – ১৪ ( নুন্যতম, বিশেষ মিশিয়ে, ১০) দিন সময় অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত –
অনেকে পদ্মা সেতুতে আগামী জুনেই যে কোন ভাবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার জন্য মানুষের কষ্টের কথা বলবে!
বলবে অর্থনৈতিক ক্ষতির কথাও!

প্রয়োজনীয় কাজ শেষ না করে পদ্মা মূল সেতুর আপার ডেক যান চলাচলের জন্য খুলে দিলে – সৃষ্ট বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান এবং পরবরতীতে যে কষ্ট ভোগ করতে হবে –
তার চেয়ে এই কিছুদিনের (বড় জোর ৬ মাসের) – কষ্ট ও ক্ষতির পরিমান – অনেক অনেক কম হবে –!

আমরা (এই পদ্মা সেতু না থাকার জন্য) দীর্ঘ দিন –
শতাধিক বছর কষ্ট করতে পারলে – আরও বড় জোর ৬ মাস ( তা ৩/৪ মাসে আনা যাবে) কেন কষ্ট করতে পারব না??

একটি দামী, লাভ জনক এবং জটিল কারিগরি প্রকল্পের কারিগরি স্থায়ীত্ত্বের ও নিরাপত্তার স্বার্থে!!

এছাড়া , কোন প্রকল্পের “সকল কাজ” পুরোপুরি শেষ না হওয়া – কোন প্রক্লপ চালু করলে –
প্রকল্প ক্ষতি গ্রস্থ হয়, দেশ ক্ষতি গ্রস্থ হবে !
আর
ঠিকাদার ( সাথে সাথে –কিছু দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও আমলারাও ) আর্থিক ভাবে লাভবান হবে ৷
পদ্মা সেতুর অংশে –
পাথর বিহীন রেল লাইন ( সেতু অংশের রেলের সকল RCC Sleeper & rail bed যৌথ ভাবে ঢালাই) সমাপ্ত করার পরই –আগামী ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুতে সড়ক ( সাথে সাথে রেল গাড়ী) চলাচল এর জন্য প্রধান মন্ত্রীর মতে খোলার প্রস্তাব সমর্থন করছি !
কিছু দেশ বিরোধী এবং অর্বাচীন লোকের কথা মত (এই অতীব গুরুত্ত্বপুরন কাজটি যথাযথ ভাবে সমাপ্ত না করে) আগামি ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য অযৌক্তিক এবং দেশ বিরোধী দাবীর চরম বিরোধিতা করছি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here