নাজিম উদ্দীন জনি,শার্শা(বেনাপোল)প্রতিনিধি: যশোরের শার্শায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিবার কল্যাণ সহকারিদের ৪র্থ শ্রেণীতে চিহ্নিত করে পত্র জারি করায় এক প্রতিবাদ সভা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শার্শা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে এ প্রতিবাদ সভা করেন বাংলাদেশ পরিবার কল্যাণ সহকারি সমিতির শার্শা উপজেলা শাখা।
বাংলাদেশ পরিবার কল্যাণ সহকারি সমিতি শার্শা উপজেলা শাখার সভাপতি তাপসী রাবেয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রতিবাদ সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র সংগঠনের যশোর জেলা শাখার সভাপতি সাফিয়া খাতুন।
এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শ্রেণী প্রথা উঠিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর ৫৯.১১.০০০০.১১০.০০১.২০১৮-২৩৭৪ নং স্মারকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল চালিকা শক্তি সাড়ে ২৩ হাজার পরিবার কল্যাণ সহকারিদের ৪র্থ শ্রেণীতে চিহ্নিত করে পত্র জারি করায় তারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এ প্রতিবাদ সভা করছেন। এসাথে তাদেরকে অবমাননা করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত পত্র অববিলম্বে প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবিতে তাদের এই আন্দোলন।
৬ দফা দাবিগুলো হলো- পরিবার কল্যাণ সহকারি পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম এইচএসসি-তে উন্নীত করণসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকের ন্যায় ১৫-তম গ্রেডে বেতনস্কেলে উন্নীত করতে হবে।
পরিবার কল্যাণ সহকারি পদ থেকে পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৩০% পদোন্নতির বিধান নিশ্চিত করাসহ টেকনিক্যাল পদ হিসেবে পরিবার কল্যাণ সহকারি পদকে ঘোষণা করতে হবে।
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে প্রশিক্ষনের জন্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবার কল্যাণ সহকারি পদ হতে ৩০% প্রেষণে প্রশিক্ষনের বিধান পূর্ণবহাল করতে হবে।
উন্নয়ন খাত হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হওয়া পরিবার কল্যাণ সহকারিদের ১০০% পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবার কল্যাণ সহকারিদের কাজের পরিধি বিস্তৃত হওয়ায় প্রতি ৫০০ দম্পতির জন্য একজন পরিবার কল্যাণ সহকারি পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং পেইড ভলান্টিয়ার নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিতে পরিবার কল্যাণ সহকারিগণের সন্তানদের জন্য ২০% পোষ্য কোটা নির্ধারণ করতে হবে।
এসময় বাংলাদেশ পরিবার কল্যাণ সহকারি সমিতির লিখিত এক পত্রের মাধ্যমে জানাযায়, সেই ১৯৭৬ সাল থেকে পরিবার পরিকল্পনা সেবাদান শীর্ষক প্রকল্পে নিয়োজিত হয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে রৌদ্র , বৃষ্টি, ঝড়, উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আমরা ধর্মান্ধতার কুসংস্কার ভেদ করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে দেশে বিদেশে প্রসংশিত করার মূল দাবিদার। অথচ সেই আমরাই যুগ যুগ ধরে বঞ্চনা আর শোষনের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়েছি। আমাদের চোখের সামনে চাকুরী কাল শেষ করে শুন্যহাতে অশ্রুসজল নয়নে বাড়িতে ফিরে যেতে দেখেছি আমাদের সহকর্মীদের। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কণ্যা মমতাময়ী শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার সময়ে আমাদেরকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত করে চাকুরী শেষে পেনশন প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন। এটুকু প্রাপ্তির পর আমাদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি। এমনকি আমাদের মৌলিক প্রাপ্তি টাইমস্কেল, চিত্তবিনোদন ভাতা, ভ্রমন ভাতাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আছি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অনেক পদধারীরা সিলেকশন গ্রেড সুবিধা পেলেও সর্বমোট ২৮হাজার সদস্যের মধ্যে বঞ্চিত আছি আমরা পরিবার কল্যাণ সহকারি ২৩ হাজার ৫শ জন।
এছাড়া, বিগত জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের প্রাক্কালে প্রধান মন্ত্রী সরকারি চাকুরীজীবিদের শ্রেণীবিন্যাস উঠিয়ে দিয়ে এখন হতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী হিসেবে কোন কর্মচারিকে চিহ্নিত করার সুযোগ না রাখলেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ১৯/১২/১৮ ইং তারিখের পপঅ/প্রশা-১/নিয়োগ-২৬৫/৩০১৫/৩২৭ নং স্মারক পত্রে পরিবার কল্যাণ সহকারিগণকে ৪র্থ শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত করে আমাদেরকে চরমভাবে হেয় করা হয়। অথচ প্রাইমারি সহকারি শিক্ষক ও পরিবার কল্যাণ সহকারিদের চাকুরী এক সময় একই গ্রেডে চিহ্নিত ছিল।
এসময় তারা তাদের দৃঢ় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল হতাশা বঞ্চনা আর শোষনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের লালিত প্রত্যাশা বাস্তবায়নে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উক্ত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পরিবার কল্যাণ সহকারি নাজমা খাতুন, মর্জিনা খাতুন, সেলিনা পারভীন, লাভলী খাতুন, তাছলিমা খাতুন, সানজিদা খাতুন, শিরিন সুলতানা, রাশিদা খাতুন, রুপালী পারভীন, নুরুন্নাহার, রহিমা খাতুন, তামান্না সুলতানা, ফরিদা খাতুন, খালেদা খাতুন, রওশনারা, নার্গিস বেগম, সাপিয়া খাতুন, ছালমা খাতুন, তহুরা খাতুন, ছফুরা খাতুন, শাহনাজ পারভীন, শিল্পী খাতুন, শামীমা খাতুন, নুরজাহান খাতুন, শারমিন খাতুন, শরিফা ইয়াসমিন, নাসরিন আক্তার, উম্মে সালমা, শামিমা আক্তার, মাহমুদা খাতুন, রেশমা খাতুন, পারুল খাতুন প্রমুখ।