মিজানুর রহমান মিজান (শরিয়তপুর) – শরীয়তপুরের ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হাওলাদারের কথা মনে আছে? ২০১৭ সালে তাকে নিয়ে দেশের সবগুলো জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছিল, তোলপাড় হয়েছিল দেশজুড়ে। ওই বছর নভেম্বরে বেরিয়ে আসে এই ছাত্রলীগ নেতা ভয়ংকর অপকীর্তির সব তথ্য। ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল আরিফ হোসেন হাওলাদার। তার কাজ ছিল, গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে নারীদের ভিডিও ধারণ করে পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন। এরপর আবার ধর্ষণের ভিডিও ধারণও করতো আরিফ। এসব ভিডিও অনলাইন ছড়িয়ে দিতো সে। আর তা চলে যায় উপজেলার মানুষের হাতে হাতে।
লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনার শিকার নারীরা এসব কথা কাউকে না বললেও এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোতে গৃহবধূ ও কলেজছাত্রীসহ ছয় জন নারীর সঙ্গে আরিফকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রথম দিকে পুলিশ আরিফের পক্ষ নেয়। এমনকি এর প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠানেও বাধা দেয় প্রশাসন।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত আরিফের এসব অপকর্ম প্রকাশের পর বাধ্য হয়ে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এক পর্যায়ে জনগণের চাপে আরিফকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হয় ধর্ষণের মামলা। সেখানে পুলিশের কাছে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করে আরিফ। এরপর কোনও অদৃশ্য কারণে ছাড়া পেয়ে যায় সে। হয়নি কোনও সাজা। উল্টো সম্প্রতি তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা গেছে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার বিভিন্ন চিত্র। রাজধানীর দারুস সালাম থানা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সে।
আরিফের ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায়, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের সঙ্গে বিভিন্ন ছবি। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায়ও সক্রিয় ছিল আরিফ। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণির সঙ্গেও ছবি আছে তার। এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, শরীয়তপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি কি এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে আরিফের মতো একজন কুখ্যাত ধর্ষককে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
আওয়ামী লীগের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই দেখা যায় আরিফকে। এমনকি নিজের কাজের জন্যও তার মধ্যে নেই কোনও অনুশোচনা। উল্টো কেউ তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কিছু লিখলে দলের দোহাই দিয়ে ঔধ্যত্ম্য দেখায় সে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আরিফ মাঝেমাঝে এলাকায় যায়। তার কোনও সাজা হয়নি। বরং আগের চেয়ে রাজনীতিতে পদোন্নতি হয়েছে তার।
আরিফকে নিয়ে ২০১৭ সালে দেশের সবগুলো প্রথম সারির গণমাধ্যমে সংবাদ হলেও তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে কেউ কথা বলছে না। কেন তার সাজা হয়নি, এতবড় অপকর্ম করেও কীভাবে সে রাজনীতি করে যাচ্ছে- এ নিয়ে কেউ কোনও কথা বলছে না। স্থানীয়দের দাবি, কোনও ধরনের রাজনৈতিক আশ্রয় না দিয়ে দ্রুত আরিফের সাজা নিশ্চিত করা হোক। অপরাধী এভাবে পাড় পেয়ে গেলে অন্যরাও অপরাধে উৎসাহিত হবে।