ডিমলা ইউপি নির্বাচনঃ চূড়ান্ত ফলাফলে গড়মিল, নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ

0
0
ক্রাইম রিপোর্টারঃ নীলফামারী।চতুর্থ ধাপে নীলফামারীর ডিমলা ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও কেন্দ্র ভিত্তিক ভোটের ফলাফল প্রস্তুতে গড়িমসি,গাফিলতি,গড়মিল ও স্বেচ্ছাচারিতা সহ নানান অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহাবুবা আক্তার বানুর বিরুদ্ধে।ওই সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বৃহস্পতিবার(৩০ ডিসেম্বর)রাত পর্যন্ত কেন্দ্র ভিত্তিক চূড়ান্ত ফলাফল গণমাধ্যমকর্মীদের দেখাতে ও দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।এমনকি নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধিগণও তার আগে থেকে ওই অফিসে বার বার ধরনা দিয়ে অফিস কর্তৃক তাদের নির্বাচিত রেজাল্ট শীট (ফলাফল পত্রক)সংগ্রহ করতে পারেননি!আর যারা পেয়েছেন তাদের অনেকের ফলাফলেও রয়েছে ব্যাপক গড়মিল!
জানা যায়,গত রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) চতুর্থ ধাপে ডিমলা উপজেলার সাত ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।সাত ইউনিয়নের মধ্যে বালাপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রদীপ কুমার রায় সাধারণ সদস্য(ইউপি সদস্য)পদে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে মোট ৬৭৪ পেয়ে বিজয়ী হন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইদ্রিস আলী তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৬২ ভোট।একই পদে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে এই ওয়ার্ডে বিকাশ চন্দ্র রায় ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৪২৬ ভোট, আব্দুল মান্নান টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ৪০৩ ভোট,প্রকাশ চন্দ্র মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ২০৪ ভোট।এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২৯৮০জন।অথচ নির্বাচন অফিস কর্তৃক বিজয়ীকে(নির্বাচিত প্রদীপকে)দেয়া চূড়ান্ত কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল পত্রে দেখা যায় তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৬৬৪।ওই পত্রে সেই ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ১২৫৯!শুধু তাই নয়,নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহন শেষে কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল ঘোষণার কন্ট্রোল রুমে(উপজেলা পরিষদ হলরুমে)উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে না দিয়েও গড়েছেন নতুন রেকর্ড!অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র ভিত্তিক ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি লাইভও প্রচার করতে সকলে আমরা দেখে থাকি!
ওইদিন রাতে সাত ইউনিয়নের বেসরকারি ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায়ও দেখা যায় অস্পষ্টতা ও গোঁজামিল।রাত প্রায় ১১টা ৫৬ মিনিটের সময় বালাপাড়া ইউনিয়নের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার সময় ১৪ ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করে ১০কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর ফলাফল ঘোষণা সমাপ্তি করে সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীগণ কে-কত ভোট পেয়েছেন তার স্বাক্ষরিত ফলাফল পত্রক গণমাধ্যমকর্মী সহ অনেকের নিকট সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এত গভীর রাতে চূড়ান্ত ফলাফল তবুও আবার ১৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১০ কেন্দ্রের কেনো এমন প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনেই।কেনেনা সেই ফলাফল পত্রকের তথ্য মতে বালাপাড়া ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী ৭৪৩৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বিজয়ী হয়েছেন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আফরাইম আল মিছরী(বাবলু)চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫৮০ ভোট ও নৌকা প্রতীকে জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ২৭৫৪ ভোট।অথচ স্থানীয়দের বরাতে কেন্দ্র ভিত্তিক দেয়া তথ্যে পূর্ণাঙ্গ(১৪ টি কেন্দ্রের) ফলাফলের হিসেবে জাহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৯৬৫ ভোট,আফরাইম আল মিছরী পেয়েছেন ৫৫৭৭ ভোট, জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ৫৩২২ ভোট।গণমাধ্যমকর্মীরা গোঁজামিল এই হিসেব নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) উপজেলা নির্বাচন অফিসে ধরনা দিলেও কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে দায়সারা ভাবে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বানু।
বালাপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বরের নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য প্রদীপ কুমার রায় বলেন,আমার ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে আমি মোট ভোট পেয়েছি ৬৭৪ টি। কিন্তু নির্বাচন অফিস কর্তৃক আমাকে যে রেজাল্ট শীট দেয়া হয়েছে সেখানে উল্লেখ করা করা হয়েছে ৬৬৪ ভোট।বাকী ১০ ভোট উধাও।আবার আমার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২৯৮০ হলেও ওই শীটে মোট ভোটা সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ১২৫৯!
আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাকে অভিযোগ করলেও তিনি তা আমলে না নিয়ে এক সেকেন্ড কথা বলার সময় নেই বলে আমাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলেন!
বেশকিছু সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন,আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়ম মোতাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করি। কিন্তু তিনি যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের আগের দিন(২৫ ডিসেম্বর)আমাদের অনুমতি পত্র দেয়ার কথা থাকলেও তিনি সেদিন মাত্র সাতটি ইউনিয়নের ভোটের সরঞ্জাম পাঠাতে রাত ৮ টা পার করেন।পরে রাতে স্থানীয় সাংবাদিকরা অনুমতি পত্রের জন্য নির্বাচন অফিসে ভিড় জমালে তিনি তালবাহানা করতে থাকেন।এ সময়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্তরিকভাবে নির্বাচনের জন্য সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ অনুমতি পত্র(আইডি কার্ড)প্রদান করেন।তারা আরও অভিযোগ করে বলেন,অতিতের অন্যান্য নির্বাচনে ভোটের ফলাফল ঘোষণার কন্ট্রোল রুমে জনপ্রতিনিধি সহ সাংবাদিকদের বসার জন্য স্থান নির্ধারণ করা থাকলেও এবার কোনো সাংবাদিকদের অজানা কারণেই ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি!আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পাঁচদিনেও উপজেলা নির্বাচন অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করে কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল পত্রক প্রস্তুত হয়নি বলে দেখাতে ও দিতে পারেননি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। উল্টো সাংবাদিকদের সাথে তিনি অশোভন আচরণ করেন।অতিতেও এই কর্মকর্তা সেবা নিতে আসা ব্যক্তি, সাংবাদিক সহ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, জনপ্রতিনিধি ও নিজ অফিস স্টাফদের সাথে অনেক বাজে আচরণ করেছেন। বেশিরভাগ সময় তাকে অফিসে অনুপস্থিত পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বালাপাড়া, পুর্ব ছাতনাই,ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহাবুবা আক্তার বানুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখনো কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল চূড়ান্ত হয়নি তাই সাংবাদিকদের দিতে পারবোনা।অনেক ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে এখনো।কবে কখন দিতে পারবেন ও কেনো এতদিনেও ফলাফল চূড়ান্ত হলোনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,কবে পারবো তা জানিনা।আর কেনো এখনো প্রস্তুত হলোনা তার কৈফিয়ত কি সাংবাদিকদের দিতে হবে।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে কৈফিয়ত চান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল চূড়ান্ত করে ইতিমধ্যে আমরা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করেছি।
সাংবাদিকরা চাইলেই তা নিতেই পারেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কেনো দিলোনা ও তার ব্যাপারে যে বিষয় গুলো আমাকে অবগত করা হলো সে গুলো আমি দেখব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন,এটা আসলে নির্বাচন কমিশনের বিষয়।আমার মনে হয় এ বিষয়ে কমেন্ট করা আমার ঠিক হবেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here