স্টাফ রিপোর্টার – যশোরের অভয়নগরে ইউরিয়া সারের কারসাজি ধরা পড়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাঙ্গাগেট মশরহাটী গ্রামে ভৈবর সেতু সংলগ্ন আক্তার এ্যাগ্রো অ্যান্ড ফার্টিলাইজার ইন্ডাঃ লিঃ-এর ফ্যাক্টরির মধ্যে সাউথ ডেল্টা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ইউরিয়া সার কারসাজির ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়ে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ইউরিয়া সার রি-প্যাকিংকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বস্তা ইউরিয়া সার। আটক করা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই স্টাফকে। এ ঘটনায় প্রচলিত আইনে মামলার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীনুজ্জামানের নেতৃত্বে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান, অভয়নগর থানার এসআই হাবিবসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন।
সাউথ ডেল্টায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কথা বলছেন। এ সময় ফাক্টরির মধ্যে বিসিআইসি-এর হাজার হাজার নতুন বস্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিছু বস্তায় প্রায় ৩ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউরিয়া সার গুঁড়া করে রি-প্যাকিং করা রয়েছে। ফাক্টরির মধ্যে বরফ ভাঙা একটি মেশিন, কয়েকটি দুরমুজ, বেলচাসহ বিভিন্ন মালামাল ও হাজার হাজার বস্তা মেয়াদোত্তীর্ণ জমাট বাধা ইউরিয়া সার বস্তাবন্দি অবস্থায় সাজানো রয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ভৈবর সেতু সংলগ্ন আক্তার এ্যাগ্রো এন্ড ফার্টিলাইজার ইন্ডাঃ লিঃ-এর ফ্যাক্টরির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জমাট বাধা ইউরিয়া সার একটি মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জামের সাহায্যে গুড়া করে রি-প্যাকিং করা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হয়।
ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় কারখানার মধ্যে থাকা সকল ইউরিয়া সার জব্দ করা হয় এবং সাউথ ডেল্টার স্টাফ ঢাকা গাজীপুরের আবুল কালামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদের ছেলে শহিদুল ইসলাম নামের দুইজনকে আটক করা হয়।
এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে সাউথ ডেল্টার কোনো বৈধ কাগজপত্র থাকলে তা উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানীর সঙ্গে, তিনি জানান তাৎক্ষনিক কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সাউথ ডেল্টার কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অফিসের কোন অনুমতি ছাড়াই সরকারি সার এভাবে রি-প্যাকিং করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালের ইউরিয়া সার, যার প্রতিটি বস্তায় সার জমাট বেধে কার্য প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। এ সার কৃষকের মাঝে পৌঁছালে কৃষক এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাউথ ডেল্টা নামের এ প্রতিষ্ঠান কৌশলে চায়না, দুবাই, সৌদি এরাবিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নতুন মোড়কে নষ্ট সারগুলো প্যাকেটজাত করার অপরাধ করেছে। রি-প্যাকিং-এর কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। সকল সারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে সাউথ ডেল্টার মাঠ সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক ঢাকার একে নাঈমউদ্দিন। এখানে তাদের প্রায় ৪০ হাজার বস্তা ইউরিয়া সার রয়েছে। যা প্রায় ৩ বছর আগের সার। নতুন বস্তায় রি-প্যাকিং করার অনুমতি রয়েছে। তবে সেই অনুমতিপত্র খুলনা অফিসে থাকায় তিনি দেখাতে পারেননি।