ডা:মাহমুদুর রহমান রিজভী – মাইকেল এর সাথে বউ এর বিশাল বাকবিতন্ডা। রাতে খাবারের সময় তরকারিতে অতিরিক্ত তেল এর কথা বলতেই বউ তেলে বেগুনে রেগে যায়।তারপর এক কথায় দু কথায় সেই প্রেমের সময় থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সব উঠে আসে।বউ এর শেষ প্রফাইল পিকে অদ্ভুত সুন্দর বা খুব চমৎকার লাগছে এ ধরনের কথা না লেখার কারণে তার যে চাপা রাগ রয়েছে তাও বুঝা যায়। রাত সাড়ে তিন টায় পতিদেব এর মনে পড়ে এখন ঘুমানো প্রয়োজন।তাই নিজের ইগো বাদ দিয়ে বউকে রান্না, রুপ, অসাধারণ বিবাহিত জীবন তার, এসব বলে ভোজ্য তেলের কথা ভুলিয়ে ঘুম পাড়ায়।সকালে তারাতাড়ি উঠেই দেখে অফিসের গাড়ি অপেক্ষায় আছে।ড্রাইভার রাগী গলায় কিছু বলার আগেই রাতের শিক্ষা থেকে মাইকেল ড্রাইভারকে বলে কি মফিজ ভাই চুলে কলব দিয়ে তো বয়স অর্ধেক কমিয়ে ফেলেছেন।ভাবি আজ আপনারে আর চিনতে পারবে না।মফিজ আপাতত নরম হলো। অফিসের সামনে নেমেই নতুন আপদ।সিবিএ কর্মচারীদের সমাবেশ। এক নেতা কর্কশ গলায় চেচিয়ে যাচ্ছে বেতন আর সুবিধা নিয়ে।কিন্তু এ শালাই কয় দিন আগে মালিককে বলেছে এখন যা দিচ্ছেন এই বেশি।কাজে ফাকি দেয়, মাইনেও বেশি নেয়। মালিক তার বেতন বৃদ্ধি করলেই আর কোন শব্দ বের হবে না।সবাই জানে এসব।তাও সবাই বলছে সাবাশ ভাই,ভাই আপনিই পারবেন,ভাই আপনার পাশে আছি ইত্যাদি ইত্যাদি।মাইকেল আর বাইরে থাকবে কেন?একখান হাসিমাখা সেলফি তুলে নেতাকে ট্যাগ দিয়ে লিখে ফেললো তার অমর বানী ”সৎ, নিরহংকার, পরোপকারি,বিজ্ঞ,মেহনতি মানুষের আস্থার প্রতিক ভাই এর সাথে আন্দলোনে”।মালিকপক্ষের কয়েকজন আবার তার ফেবুতে আছে।তাদের যে কোন ছবি,আপডেট এ লাভ রিএক্ট দিয়ে পাশে থাকে।নেতার ছবি দেয়ার সময় তাই তাদের কাসটোমাইজ করে দিলো। অফিসে এই আপার শাড়ি সুন্দর, ঐ ভাইয়ের ওজন কমেছে আর নেতার বদনাম করেই সময় গেল।দুপুরে একটা দাওয়াত।ম্যানেজার স্যার আসবে। না গেলেই নয়।ম্যানেজার এর গাড়ি আসার সাথে সাথে কাছে এগিয়ে গেলাম পরম শ্রদ্ধা নিয়ে।গাড়ি থেকে এক ফুটফুটে বাচ্চা নামলো।নামার সাথে সাথেই কোলে তুলে নিয়ে চুমা দিতে লাগলো যেন মাইকেলের খুব আপনজন।ম্যানেজারকে যেই বললো স্যার আপনার বাচ্চাটা একদম প্রিন্সের মত।স্যার তো হেসেই খুন। বলে আমার না ড্রাইভার এর বাচ্চা।সাথে সাথে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো স্যার তাইতো বলি আপনার মত গায়ের রঙ না।তবে একথাও বলতে ভুললো না স্যার একজন মানুষ কি পরিমান নিরহংকারী হলে আপনার মত হয়।খাবারের সময় রেস্তোরাঁয় অসংখ্য বয় থাকা সত্ত্বেও তারা কয়েকজন স্যার এর খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখার জন্য পাশে দাড়িয়ে থাকলো।স্যার এর পাশে যারা দাড়াতে পারেনি তাদের দেখে খুব খারাপ লাগলো। মনে হলো তারা যেন জীবনে কি এক সুযোগ হারালো। না খেয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় বাসায় এসে দেখে বউ আজ নতুন রেসিপি নিয়ে এসেছে।ডুবা তেলের আমের আচার,ডুবা তেলে ভাজা লুচি আর হাসের মাংস। কি আর করার সারাদিন অনেক গিয়েছে,এবার কিছু মাইকেলের নিতে হবে।মাইকেলের মনে হলো এখন অধিকাংশ বাঙালির জীবন মনে হয় এমনই।
ডাঃ মাহমুদুর রহমান রিজভী
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং স্বাচিপ নেতা