অভয়নগরে ক্যান্সারে আক্রান্ত চার কন্যা সন্তানের জননী ময়না বেগমের করুন কাহিনী

0
1
অভয়নগরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ সন্তানের জননী ময়না বেগম
ডা. শাহরিয়ার আহমেদ: মালবাহী ট্রেনের উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্বামীপরিত্যক্তা চার কন্যাসন্তানের জননী নওয়াপাড়া গ্রামের ময়না বেগম (পলি)। এরই মধ্যে তার শরীরাংশে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।
নেই মাথা গোজার ঠাঁই; বিধবা বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
“ময়না” জীবনযুদ্ধে হারনামানা একজন বিরঙ্গনার নাম। চরম অভাবের যন্ত্রনা-ক্ষুধা দারিদ্রতার চুড়ান্ত সীমা পার করে ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছে স্তন ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যধিকে সাথে নিয়ে। জন্মের প্রায় ১৪/১৫ বছরের মধ্যে পিতৃহীন, বৃদ্ধা বিধবা মায়ের জীবন যন্ত্রনাকে সঙ্গি করে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে উঠেছে নওয়াপাড়া গ্রামের ধোপাদী মোড় এলাকার হত দরিদ্র ময়না বেগম ওরফে পলি। মাথা গোজার ঠাঁই নেই পলির। অন্যের জমিতে কোনরকম একটি কুঁড়ে ঘরে বিধবা মায়ের অন্যের বাড়ি থেকে চেয়ে আনা উচ্ছিষ্ট খাবার আর ছেড়া বাদ দেয়া কাপড় পরে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে চলা সৈনিক ময়না বেগম চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
>>দুরারোগ্য ক্যান্সারের খবর পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে গতকাল বিকালবেলা তার বাড়িতে উপস্থিত হই। বাড়িতে যেয়ে দেখা যায় ভাঙ্গা ঘরের এক কোনে আসরের নামাজ আদায় করছে পলি। বসতে দেয়ার জায়গা নেই ওদের। লাঠি ভর দিয়ে বেরিয়ে আসলেন ময়না ওরফে পলির বৃদ্ধা মা। মেয়ের খোঁজ নিতে আসার খবরে কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, আমি যে কোন সময় মরে যাবো। আমার মেয়েকে কোথায় রেখে যাবো বাবা। কাঁপতে কাঁপতে মাটিতেই বসে পড়লেন বৃদ্ধা। নামাজ শেষ করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো ময়না। চোখে পানি টলমল করছে। হয়তো নামাজ শেষে স্রষ্টার কাছে নিজের জন্য ফরিয়াদ করছিলো সে। ছালাম বিনিময় করে বসতে দিতে না পারার লজ্জায় নুয়ে যাচ্ছিল সে। তিনবেলা ঠিকমত খাবার জুটাতে পারেনা। রোগের যন্ত্রনায় সারারাত নির্ঘুম কেটে যায়। ময়না বলছিল, আমি কি করবো তা ভাবতেও পারিনা। স্থানীয়দের সহায়তায় এ পর্যন্ত এসেছি। কাঁদতে কাঁদতে বলে চললো ময়না; প্রায়ই পত্রিকার খবরে পড়ি আমাদের সমাজের বিত্তবান মানুষগুলোকে আমাদের মত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের লেখাপড়ার খরচের ভার বহন করেন। তাঁরা যদি আমার জন্য একটু চিকিৎসা ব্যবস্থা করে সামান্য এক খন্ড জমি আর একটি কুঁড়েঘরের ব্যবস্থা করতেন। যে ঘরে আমার বিধবা মা’কে নিয়ে নিরাপদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারতাম। মৃত্যুর আগে আমার বৃদ্ধা মা অন্তত এটুকু শান্তনা নিয়ে যেতেন যে তার মেয়ের জন্য একটু মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। এছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আর কোন স্বপ্ন নেই। ঢুকরে কেঁদে উঠলো পলি। আর কোন কথা বলতে পারলোনা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ওই এলাকার ধোপাদী মোড় সংলগ্ন অন্যের জমিতে ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরে মা’কে নিয়ে বসবাস করে স্বামীপরিত্যক্তা ময়না বেগম ওরফে পলি। তার পিতা মোস্তফা’র মৃত্যুর পর থেকে অসহায় বিধবা মায়ের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় ছোট বেলা থেকেই গ্রাম্য মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে জীবীকার ব্যবস্থা হয় ময়নার। একসময় বিবাহযোগ্য হয় সে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বিবাহ হয় ময়না’র। বিবাহ পরবর্তী পরপর চারটে কন্যা সন্তানের জন্মদেয় ময়না। তারপর তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়। তারপর থেকে আকিজ জুটমিলে তার একটা বদলি শ্রমিকের চাকরীর ব্যবস্থা হয়। প্রায় সাতবছর চাকরিরত অবস্থায় তার শরীরে দুরারোগ্য ব্যধি বাসা বাঁধাই এখন সেই বদলি চাকুরীবাকরিও নেয়। উল্লেখ্য, মিল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য যে সামান্য সহযোগিতা করেছেন তাতে চিকিৎসা সম্পন্ন হয়নি।
এই সমাজের কাছে, দেশের সরকার প্রধানের কাছে এবং বিশেষ করে #আকিজ জুট মিল মালিক জনাব শেখ নাসির উদ্দিন সাহেবের কাছে তার ছোট্ট একটি চাওয়া, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে একটু মাথাগোঁজার ঠাঁই হলে বাকি জীবন বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে বাঁচতে পারতাম।
যোগাযোগ ঃ ময়না বেগম ওরফে পলি #০১৯৭১৭৩৩৫৯৮ (বিকাশ#)
কার্টেসী – আজিজুর মন্টু (অভয়নগর)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here