ডাঃ শেখ শাহরিয়ার আহমেদ (সম্পাদক) – গ্রাম বাংলার প্রাচীন যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মধ্যে, এক সময় প্রধান অবলম্বন হিসেবে গরুর গাড়ি ব্যবহৃত হতো। মানুষ যখন পশুকে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসাবে ব্যবহার করতে শিখলো, তখন গরুর গাড়িই যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি বিবাহের অথিতির ক্ষেত্রেও গরুর গাড়ির কোন বিকল্প ছিলনা। তাই গরুর গাড়ি একটা ঐতিহ্যের অংশও বটে। প্রাচীন ইতিহাসের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল যশোর জেলায় গরু মহিষের গাড়ির প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই। অভিজাত পরিবারের সদস্যরা, গরুর গাড়িকেই যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতো। আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যেত গরুর গাড়ি চড়েই। এক সময় এ জেলার যে কোন গ্রামেই চোখে পড়তো গরু কিংবা মহিষের গাড়ি। কিন্তু এখন যন্ত্রচালিত যানবাহনের কারনে, সেই দৃশ্য খুব একটা আর চোখে পড়ে না। এক সময় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিয়ে কৃষকেরা জমি চাষাবাদ এবং মালামাল বহনের জন্য এটি ব্যবহার করতো।আধুনিক যুগে পাওয়ার টিলার আসার কারণে গরু দিয়ে চাষাবাদ যেমন হয়না ঠিক তেমনি গরুর গাড়ির কাজও পাওয়ার টিলার দিয়ে করা হয়। কালের বিবর্তনে এই গরুর গাড়ি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। যে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরে থাক, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির সঙ্গে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের আধুনিক আবিস্কার এবং কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির ছোয়া ও যন্ত্রের নতুনত্বের কারনে গরুর গাড়ির জায়গা দখল করে নিয়েছে বাস,ট্রাক, ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন, ভটভটিসহ নানান যন্ত্র চালিত যানবাহন। গরুর গাড়ি একটি স্বাস্থ্য সম্মত যানবাহন। এখানে বায়ু দূষণ ও সড়ক দূর্ঘটনার তেমন কোন সুযোগ নেই কিন্তু দুঃখের বিষয় গরুর গাড়ির ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ফলে পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।