দেশের সকল অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে জেলায় জেলায় অভিযান শুরু

0
0

ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী সারাদেশের সকল অনিবন্ধিত অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে আজ শনিবার (২৮শে মে) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসন একযোগে ব্যবস্থা নিতে অভিযান শুরু করেছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে।

দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় নিযুক্ত দৈনিক সমাজের কন্ঠের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি স্থানের চিত্র তুলে ধরা হলো।

টাঙ্গাইলে একেরপর এক গড়ে উঠেছে অনিবন্ধিত অবৈধ ক্লিনিক। আর এসব বন্ধ করতেই আজ শনিবার (২৮ মে) সকাল থেকে শুরু হয় সদর উপজেলা প্রশাসনের অভিযান।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রানুয়ারা খাতুনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রানুয়ারা খাতুন।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অভিযানে ক্লিনিকগুলোতে কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাতক্ষনিত বন্ধ ঘোষণা করে চারটি ক্লিনিক সিলগালা ও তিনটি ক্লিনিক মালিককে জরিমানা করা হয়েছে।

সিলগালাকৃত ক্লিনিকগুলো হচ্ছে, স্বদেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, আমানত ক্লিনিক এন্ড হসপিটাল ও ডিজিল্যাব।

এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় দি সিটি ক্লিনিককে ২০ হাজার টাকা, কমফোর্ট হাসাপাতালকে ৩০ হাজার টাকা এবং ডিজিল্যাব ক্লিনিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাসহ রোববার দুপুর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন জানান, কোন বৈধ কাগপত্র না থাকায় তিনটি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়া ডিজিল্যাবে সিজারিয়ান রোগী থাকায় ৩০ হাজার জরিমানা করে রোববার দুপুর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। তারপর সেটিকে সিলগালা করা হবে।

এদিকে নেত্রকোণার অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

শনিবার দুপুরে নেত্রকোণার সদরের পৌরশহরের নাগড়া এলাকার অনুমোদনহীন তানিয়া ও লির্বাটি প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বন্ধ করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এসময় হাসপাতাল দুটিকে পাঁচ হাজার করে মোট দশ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নেত্রকোণায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা আক্তার।

পরে হাসপাতালে থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নেত্রকোণায় জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জানা যায়, নেত্রকোণা জেলায় ১৩১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এদের মধ্যে অনুমোদন আছে ৮৩টির আর অনুমোদনহীন ৪৮টি।

নেত্রকোণা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তথ্যমতে, জেলায় প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে অনুমোদন আছে ১৯টির আর অনুমোদন নেই ১০টির।

অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান চলবে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা।

এদিকে অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহের তালিকা প্রস্তুত করছে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ।

রোববার (২৯ মে) তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মজেয় দত্ত।

তিনি জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, কিন্তু দাপ্তরিক দীর্ঘসূত্রীতার কারণে তা প্রক্রিয়াধীন আছে তারা এ অভিযানের আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু যারা ন্যূনতম কোন অনুমোদনের পরোয়া না করে ব্যবসা করছেন তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাইকোর্টের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা শহরের অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এসময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়ক এলাকার তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দুইটি ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ করা হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই অভিযান চালান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমান।

অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টার, আমাদের সনো ও চুয়াডাঙ্গা আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার সিলগালা করা হয়। এছাড়া ইসলামী হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও তিশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। অভিযানের খবরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখে পালিয়ে যান মালিকরা।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আওলিয়ার রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় ২৫ টি ক্লিনিক ও প্যাথলজি চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে শনিবার সদর হাসপাতাল সড়কের বেশকিছু ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি সেন্টারে অভিযান চালানো হয়।

ভোলায় নিবন্ধন না থাকায় আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়েছে।

শনিবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী সুজার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ভোলা নতুনবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঐ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী সুজা জানান, আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল হাসপাতালে বৈধ কাগজপত্রসহ লাইসেন্স না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটিকে দ্রুত সিলগালা করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here