যশোর প্রতিনিধি : চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) দেশের সর্ববৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। তবে কাস্টমসের পরবর্তী সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা হিসাবে এ ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ১৪৫ কোটি ।
বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, বন্দর ও কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম,অব্যবস্থাপনা, শুল্কফাঁকি ও পণ্য খালাসে হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির কারণ। বাণিজ্য তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থ্যাগুলোর মধ্যে পরস্পরের সমন্বয়ের অভাব। এতে ব্যবসায়ীরা এ পথ থেকে বাণিজ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব আয়ে বাধাগ্রস্থ হয়েছে তেমনি লোকশান গুনেছেন ব্যবসায়ীরাও। বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার গতি ফিরবে বাণিজ্যে।
আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুল্কফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, দেশে ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩ বন্দরের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউজ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৫ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক যাত্রা। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার মে.টন কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মে.টন। বর্তমানে বন্দরে ২৮টি পণ্যগার, ৮টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ও ১টি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা । এখানে ঘাটিত রয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী আজিম উদ্দীন বলেন, কাস্টমসে আমদানি পণ্য পরীক্ষণের নামে হয়রানি বেড়েছে। টাকা না দিলে নমুনা ঢাকায় ল্যাবরোটরিতে পাঠাতে চায়। পণ্য পরীক্ষণের ভাল ব্যবস্থা আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর থাকলে হয়রানি পোহাতে হতোনা। ঝামেলা এড়াতে এপথে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমদানি পণ্য কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২/৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। আমদানি, রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার। এতেও লোকশানের কারণে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠ বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছে না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।
আমদানি রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আমিনুল বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন সমস্যা আর অনিয়মে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে অনেক ব্যবসায়ী। এখনও সাধারণ পণ্যগারে কেমিকেল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করে বন্দরে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে ভয় পায়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেন জানান, পণ্য চালান খালাসে পূর্বের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসে। শুল্কফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। শুল্কফাঁকির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।