বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিজেএমসির কাছে টাকা দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। সংস্থাটির কাছে গত ১০ বছরে আট হাজার কোটি টাকা দেওয়া হলেও তার ফলাফল সন্তোষজনক না। সংস্থাটি দুর্নীতিতে ডুবে আছে বলেই সরকার মনে করছে। এ কারণে শ্রমিকের বেতন ব্যাংক হিসাবে দিতে চাইলে সরকার।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাটকল শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য কয়েক দিন আগে বিজেএমসিকে (বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তালিকা অবশ্যই যথাযথ সময়ের মধ্যে দিতে হবে, যাতে ঈদের আগেই শ্রমিকেরা তাদের বকেয়া মজুরি হাতে পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিজেএমসির ২২টি পাটকল ও পাটকল নয় এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির পরিমাণ ২৫১ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এই বকেয়ার পরিমাণ ৩৩৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত ৬ মে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে এই পরিমাণ টাকা অনুন্নয়ন খাতের ঋণ হিসেবে দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন মিলের শ্রমিকদের আন্দোলন এবং পবিত্র রমজান মাসকে বিবেচনায় নিয়ে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই বিষয়ে ৯ মে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, শ্রমিকেরা শ্রম দিয়েছেন। সুতরাং তাদের শ্রমের মূল্য বিজেএমসিকে দিতে হবে। শ্রমের মূল্য পাচ্ছে না বলেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন, তাদের এই আন্দোলন যৌক্তিক।
গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, শ্রমিকেরা দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি বিজেএমসিতে। সে কারণেই গত দশ বছরে সরকারের কাছ থেকে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নিয়েও তারা কোনো লাভ দেখাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বিজেএমসির দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে সরাসরি শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বেতন শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিজেএমসির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বকেয়া বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ আগে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। আশা করছি শিগগির বরাদ্দ পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে খুবই আন্তরিক। টাকাটা পেলে ২০১০ সালের মজুরিকাঠামো অনুযায়ী আগামী জুন মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, মজুরি ইত্যাদি দেওয়া যাবে।’
বিজেএমসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ঈদের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। নতুন মজুরিকাঠামো অনুযায়ী বেতনকাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করার পর বাড়তি বেতন-মজুরি দেওয়া হবে।’