খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, শুভ মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। চার অক্টোবর ষষ্ঠীপূজা। ওই দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাঁকঢোল আর কাঁসরের শব্দ। তার সঙ্গে আট অক্টোবর দশমী পূজা ও দশহরার মধ্যদিয়ে পাঁচ দিনব্যাপি দুর্গোৎসব শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, জেলার প্রত্যেকটা মন্দিরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে উপজেলা কমিটির সভা হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এবার ঘটেনি। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবারও পূজা উদযাপন করা যাবে বলে আশা করেন তিনি।
জেলার মোট ৯৯৮টি মণ্ডপের মধ্যে রয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এলাকায় ১২৯টি এবং নয়টি উপজেলায় ৮৬৯টি পূজামণ্ডপ। এবার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৯৭টি মণ্ডপে এবং সবচেয়ে কম ফুলতলায় ৩২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর নগর এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হবে আড়ংঘাটা থানা এলাকায়।
এদিকে গত দুই বছরের চেয়ে এবছর জেলায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিটি উপজেলায়ও আলাদা আলাদাভাবে গতবারের চেয়ে বেশি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছর খুলনা নগর এলাকা ও জেলার নয়টি উপজেলা মিলিয়ে ৯২১টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। এরমধ্যে জেলায় ৭৯৮টি এবং নগরে ১২৩টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। তাঁর আগের বছর জেলায় ৭৭৩টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্দিরে ভাষ্কর শিল্পীদের মূর্তি তৈরির কাজ চলছে বিরতিহীনভাবে। হাতে স্বল্প সময় থাকায় দিনরাত ব্যস্ত রয়েছে প্রতিমাশিল্পীরা। কোথাও দো-আঁশ মাটির প্রলেপ দেওয়া শেষ। আবার কোথাও রং তুলির আঁচড়ে সেজে উঠেছে প্রতিমা। সবকিছু মিলিয়ে জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে শারদীয় আমেজ। অন্যদিকে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পূজা উপভোগ করতে জামা কাপড় কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করছে। তবে প্রতিমা তৈরির আনুষঙ্গিক উপাদানের মূল্য বৃদ্ধিতে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন কারিগর ও মৃৎশিল্পীরা। তাঁরা জানান, আগের মতো পয়সা-কড়ি পাওয়া যায় না। সেই সঙ্গে মূর্তির কাঁচামালের দামও বেড়ে চলছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার আটটি থানায় ১২৯টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে সদর থানা ২৫টি, সোনাডাঙ্গা ১১টি, খালিশপুর ১১টি, দৌলতপুর ২২টি, খানজাহান আলী ১১টি, হরিণটানা ছয়টি, লবণচরা ১০টি এবং আড়ংঘাটা থানায় ৩৩টি পুজামণ্ডপে দূর্গাপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর জেলার নয়টি উপজেলা ৮৬৯টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে বটিয়াঘাটা ১১৮টি, দাকোপ ৮২টি, রূপসা ৭২টি, তেরখাদা ১০৪টি, দিঘলিয়া ৬১টি, ফুলতলা ৩২টি, ডুমুরিয়া ১৯৭টি, পাইকগাছা ১৪৯টি এবং কয়রা উপজেলাতে ৫৪টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক প্রস্তুতিমূলক সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন ভাস্কর গুরুপদ জোয়াদ্দার। তিনি জানান, বাবা-দাদার সময়কাল থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। এর পাশাপাশি তৈজসপত্র তৈরি করে জীবন ধারণ করে থাকেন। তাঁর সঙ্গে চার জন শিল্পী আছে। কিন্তু এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় বাড়ায় আগের মত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না।
দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা বাজার সার্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা মন্দিরে প্রতিমা প্রস্তুত করছিলেন সুমল মণ্ডল নামের এক কারিগর । তিনি বলেন, গ্রাম থেকে তাঁরা ক‘জন মিলে একটি দল এসেছে প্রতিমা প্রস্তুত করতে। এ পর্যন্ত পাঁচটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। তিনি আরও বলেন, সাজসজ্জার ওপর নির্ভর করে প্রতিটি মণ্ডপ তৈরিতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা তাঁদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। কাঠামোতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি তৈরির পর মাটির প্রলেপ দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং, সাজসজ্জা ও অলঙ্করণের কাজ।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন খুলনাটাইমসকে বলেন, ইতোমধ্যে সকল পূজামণ্ডপের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে পূজা উদযাপন করা হবে। পূজার সময় পটকা বাঁজি না করা, নামাজের সময় মাইক না বাজানো, উঠতি বয়সী ছেলেদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো নিয়ন্ত্রণ, জুয়া বা মাদকের আসর না বসানো, নারীদের ইভটিজিং প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্যও সকল পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতি আহবান জানান জেলা প্রশাসক।