আজিজুল হক নাজমুল –
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: বেশ কিছুদিন ধরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাচারী মাঠে একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধ মহিলাকে থাকতে দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয় তিনি এই উপজেলার বাসিন্দা নন। দিনের বেলা রোদে শুয়ে থাকেন। সকাল সন্ধ্যা গুটিসুটি হয়ে বসে থরোথরো করে কাঁপেন। এই প্রচন্ড শীত আর কনকনে ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে শুয়ে, বসে, ঘুমিয়ে রাত কাটান। এভাবে অবহেলা আর অযত্নে খেয়ে না খেয়ে একেকটি মহুর্ত কেটে যায় তার।
তবে সমাজের প্রতিটি মানুষই জীবন যুদ্ধে সহজে হারতে চায় না। তা এই মানসিক বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধাকে দেখলেও অনুভব করা যায়। প্রথমদিকে তাকে খালি হাতে ঘুরতে দেখা গেলেও বর্তমানে কয়েকটি বস্তাসহ মাঠেরই এদিক সেদিক ঘোরে। আগে বিভিন্ন অফিসের খোলা বারান্দা, খোলা দোকানপাট কিংবা গাছতলাতে ঘুমাতে দেখা যেত। এসবে ঠিকমতো স্থান না পাওয়ায় পরবর্তীতে খোলা মাঠেই থাকতে শুরু করে। এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন। যখন ঘন কুয়াশা পড়তে লাগলো তখন বাজারের আবর্জনার ভাগারে পরে থাকা পুরাতন কাপড়ের ন্যাকড়া, পলিথিন ও কাগজ কুড়িয়ে বস্তাভর্তি করে নিয়ে আসে। আর এই বস্তা লাইন করে সাজিয়ে রেখে উপরে শুয়ে ঘুমায়।
তার বাড়ি-ঘর আছে কি বা নাই। সন্তান আছে কি নাই। সব অজানা। তার খোঁজ-খবর নেয়ারও কেউ নেই। সমাজের চোখেও এই করুণ দৃশ্যগুলো ধরা পড়ে না। কারও পাষাণ হৃদয়ে শিহরন জাগায় না এসব ঘটনা। এসব ভাবতে গেলে হৃদয় ভেঙ্গে যায়। প্রতিটি সন্তান যদি সঠিকভাবে নিজ পিতা-মাতার খোঁজ-খবর নেয়। তাহলে হয়তোবা এরকম দৃশ্য আর কাউকে দেখতে হবে না। অসহায় ব্যক্তির পরিবার তার প্রতিবেশীরা মিলেই এর সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু কে রাখে কার খবর। মানুষ আজ স্বার্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে।
তিনিও তো একজন মানুষ। আর একজন মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। পাঁচটি মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) আছে। যার একটিও জোটেনা এরকম হাজারও মানুষের। এরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত কেন। মনে এরকম হাজারও প্রশ্ন জাগে। কিন্তু উত্তর মেলে না। প্রতিটি গ্রাম, পাড়া, মহল্লায় যদি আমরা সচেতন হই, দুঃস্থ, অসহায় মানুষের পাশে দাড়াই, প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে দেই। তাহলে এরকম ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।