প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শালিখার কানুদার খাল। চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা

0
4
জসীম উদ্দীন, মাগুরা থেকে :
”পুটি, ট্যাংরা, শিং, কৈ-খাল বিলে পাবে প্রচুর,
      মোহনীয় মাগুরাই দেশী মাছ – আছে ভরপুর’’।
প্রচীন আমল থেকেই মাগুরা শালিখা অঞ্চল দেশী মাছের জন্য খ্যাত ছিলো। কিন্ত কালের গহ্বরে বিলুপ্তি হতে চলেছে এসকল দেশী প্রজাতির মাছ। এক সময় এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো পুটি, ট্যাংরা, কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, রয়না,খয়রা, বাইন, শৈল, গজার, রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, আইড়সহ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেতো সকল প্রকার দেশী প্রজাতির মাছ। তবে বন্যা, অপরিকল্পিত বাঁধ, দখলদারদের দখল, ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপনা জমাট এর ঢলে নাব্যতা জারাতে চলেছে মাগুরা ও শালিখা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী গুলো। শালিখার এ নদী গুলো হলো ফটকি, বেগবতী,  চিত্রা। সংস্কারের অভাবে এ নদী গুলো প্রায় মৃত হতে চলেছে। নদীগুলো সংস্কার হলে কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাসহ রক্ষাপাবে এই এলাকার জীববৈচিত্র। নদ নদীর পাশাপাশি খাল বিলেরও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যা আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যপহরণ ভূমিকা রাখে।এর মধ্যে শালিখার কানুদার খাল অন্যতম। এ খালটি শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়া বাজার ও চুকিনগর গ্রামে হয়ে তালখড়ি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে কানুদার খাল নামে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষা মৌসূমে প্রায় ২০টি বিলের পানি ও বেশ কিছু খালের পানি ও খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। ফলে এ কানুদার খালটি মাছের অভয়ারণ্য  বলা হতো এক সময়।
২৫ বছর আগেও এ খালটি ছিলো এই এলাকার গর্ব। এ খালের উপর নির্ভর করে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যেরর প্রসার ঘটেছিলো। বর্তমানে মাগুরা অঞ্চলের নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় নদী সংযুক্ত প্রায় ২৫ খাল ও ১৫ বিল এখন কৃষি জমিতে পরিনত হতে চলেছে। এসব খাল বিলে পাওয়া যেতো বিভিন্ন প্রকার দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। দেশীয় প্রজাতি মাছের মধ্যে ছিল পুটি, ট্যাংরা, কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, রয়না, খয়রা, বাইন, শৈল, গজার, রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, আইড়সহ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেতো সকল প্রকার দেশী প্রজাতির মাছ। যা এখন আর দেখা যায় না।
মাগুরা শালিখা উপজেলার কানুদার খাল দীর্ঘ বছর ধরে কুচুরিপনায় নিমজ্জিত থাকায় এ খালের মাছসহ জীববৈচিত্র ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে উপজেলা প্রশাসন এলাকাবাসীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন। অবেশেষে এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে পেরে উপজেলা প্রশাসনের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে লেগে যায় এ খাল পরিস্কারের কাজে। প্রায় ২ হাজার লোক স্বেচ্ছায় খাল পরিস্কারে কাজ করেন। বর্তমানে খালটি পরিস্কার হওয়ায় খালের দু`পাশে বসবাসকারীরা সুফল ভোগ করতে চলেছে। এতে এলাকার জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।  প্রকৃতিক পরিবেশ ও জলাভূমি রক্ষায় দেড় কিলোমিটার  এ খালের কচুরিপানা পরিস্কার ও মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। এতে অনেক মৎস্যজিবীর জীবন জীবিকা স্বচ্ছল হতে চলেছে।
শালিখা উপজেলা নির্বাহি অফিসার হরে কৃষ্ণ অধিকারী বলেন, শালিখা উপজেলার প্রাচীন এ কানুদার খালে পূর্বে দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য ছিল। এ অঞ্চলের মানুষ এ খাল থেকে মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রায় দেড় কিলোমিটার এ খালের দু’ধারে ছিন্ন মুল, গরীব অসহায় মানুষ বাস করছে। খালের পরিবেশ রক্ষায় ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা খালের দু’ধারে প্রায় ৩ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। তাছাড়া এ খালের ধারে পুরানো ইকোপার্কটি সংস্কার করে বড় ধরনের রিসোর্ট তৈরি উদ্যোগ ও আমাদের নেয়েছে। সেজন্য এ খালের পশ্চিম পাশে কাজ চলমান রয়েছে। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ খাল পরিস্কার করে দেশীয়ও মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। দেড় কিলোমিটার এ খাল ২ দিন ধরে পরিস্কার করা হয়েছে। ২ হাজার সেচ্ছাসেবক এ কাজ সম্পন করেছে। খাল পরিস্কার করার পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেশীয়ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ মণ মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। এ কাজে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামীলীম,আড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদ,স্বেচ্ছাসেবক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকার সাধারণ মানুষ এএকযোগে কাজ করেছে। মাগুরা জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ বলেন, মাগুরা শালিখা উপজেলার কানুদার এ খালটি ইতিমধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার সার্বিক সহযোগীতা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় আমরা সব সময় কাজ করছি। ইতিমধ্যে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা পুরুস্কার অর্জন করেছি। আমরা চাই আমাদের বাইরের পরিবেশ সবুজের সমারহে ভরে থাক। সেই লক্ষে মাগরাকে সুন্দর পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন জেলা হিসাবে গড়তে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here