মাগুরার ২৭ কৃতি ব্যক্তিকে ভালো কাজের নাগরিক অনুশীলনের স্বীকৃতি প্রদান 

0
2
জসীম উদ্দীন,মাগুরা জেলাপ্রতিনিধি : মাগুরা জেলার ২৭ কৃতি ব্যক্তিকে  ভালো কাজের নাগরিক অনুশীলনের স্বীকৃতি প্রদান করলো জেলা প্রশাসন
————————————————–
“ভালো কাজের নাগরিক অনুশীলন, স্বীকৃতি দিবে মাগুরা জেলা প্রশাসন” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ২৬ মার্চ ২০২৩-এ শুরু হওয়া স্বীকৃতি প্রদান ( প্রায় এক বছরের বেশি সময়) এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মাগুরা এর সম্মেলন কক্ষ ‘চাঁদের হাট’ এ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ও সাফল্য অর্জনকারী ২৭ কৃতি ব্যক্তিকে ভালো কাজের অনুশীলনের স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ এর সভাপতিত্বে উক্ত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ড. শ্রী বীরেন শিকদার, মাননীয় সংসদ সদস্য, মাগুরা-০২।
ক্রীড়া, শিক্ষা ও সাহিত্য, কৃষি, পরিবেশ, সামাজিক, শিল্প ও সংস্কৃতি, প্রাণিসম্পদ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ও সাফল্য অর্জনকারী এই ২৭ কৃতি ব্যক্তিকে এই ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা পত্র, মেডেল, শুভেচ্ছা স্মারক ও ফুলের তোড়া প্রদান করা হয়।
স্বীকৃতি প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ হচ্ছেন:
১। ড. নজরুল ইসলাম, সাহিত্যিক যিনি সমাজের সকলস্তরের মানুষকে সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।
২। জনাব মোহাম্মদ নূর ইসলাম, সফল কৃষক। কমলা, মাল্টা ও দেশীয় কাগজী লেবুর চাষ করে সকল বয়সী মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
৩। জনাব সঞ্জিবন কুমার বিশ্বাস (সঞ্জিৎ),সফল আদা চাষী যিনি বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে সকল বয়সী মানুষকে কৃষিক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
৪। জনাব মোঃ শাহীন ফকির, নিজ উদ্যোগে রাস্তা মেরামত সহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সকল বয়সী মানুষকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
৫। জনাব ব্রজেন্দ্রনাথ বালা, সফল ক্যাপসিকাম চাষী যিনি সকল বয়সী মানুষকে কৃষি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
৬। জনাব মো. নাছির হোসেন, বিভিন্ন জাতের বরইসহ মাল্টা, পেয়ারা, পেপে, ড্রাগন ফল ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে সকল বয়সী মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান ও অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত করছেন।
৭। জনাব মোঃ তৈয়বুর রহমান, পাট ও পাটবীজ উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য লাভ করে মানুষকে কৃষি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে উৎসাহিত করছেন।
৮। জনাব গোপাল চন্দ্র পাল, মৃৎশিল্পের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এ জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখাসহ মৃৎশিল্পের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করছেন।
৯। জনাব কবিতা বিশ্বাস, সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা যার এ উদ্যোগ সকল বয়সী মানুষকে কৃষি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে উৎসাহিত করছে।
১০। জনাব আরিফ হাসান, তার প্রতিষ্ঠিত আরিয়ান ইলেক্ট্রনিক্স ও আরিয়ান স্পোর্টস ক্রীড়া টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করে সকল বয়সী মানুষকে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে।
১১। আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মোছাঃ তাসলিমা খাতুন যিনি শাক-সবজি চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালনের উদ্যোগ  গ্রহণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
১২। জনাব মোঃ মোহন বিশ্বাস, যার মিষ্টি তৈরির নৈপুণ্য সমাজের কারিগরি দক্ষতা ভিত্তিক পেশার মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে।
১৩। জনাব হরশিত বিশ্বাস, তালের গুড় উৎপাদনে এবং প্রায় বিলুপ্ত পেশা গাছি হিসেবে তাঁর দক্ষতার জন্য তিনি স্বীকৃতি লাভ করেন।
১৪। জনাব খাঁন মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সফল পেঁয়াজ চাষী যিনি অনেক বেকার যুবককে পেঁয়াজ চাষসহ অন্যান্য কৃষিকাজের প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
১৫। আশ্রয়ণে বসবাসকারী জনাব নওসের প্রামাণিক, স্বাবলম্বী কৃষক হিসেবে আশ্রয়ণে বসবাসকারীসহ সকল বয়সী মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহিত করছেন।
১৬। মহকুমা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মাগুরা মানুষকে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে।
১৭। জনাব সাদ্দাম হোসেন গোর্কি, রেফারি এবং  ক্রিকেট  কোচ হিসেবে সকল বয়সী মানুষকে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
১৮। জনাব শীবাস রায় যিনি বেহালা বাজানোর দক্ষতা এবং সুরের মাধুর্যের জন্য দেশব্যাপী পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
১৯। জনাব ডা: পঙ্কজ কান্তি মন্ডল, মানবিক ডাক্তার, যিনি ১৮ বছর ধরে বিনামূল্যে রোগী দেখেন ও সমাজে সেবামূলক কাজ করে চলেছেন।
২০।জনাব মোঃ মাহমুদুর রহমান সজীব, সফল পশুখামারি(গরু)। আত্মকর্মসংস্থানসহ অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে  উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
২১। জনাব সুমন পারভেজ, যিনি মুরগির খামারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃজন করে তাঁর আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন।
২২।জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন, সফল খামারি যিনি স্থানীয় কৃষকদের পশুপালনের ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করে পশুপালনের উপকারিতা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
২৩। জনাব মো: অছিউজ্জামান বুলবুল, সহযোগী অধ্যাপক যিনি বিগত পঁচিশ বছর যাবৎ বিনাপারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বীয় সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ঘটানোর জন্য নিরলসভাবে  শিক্ষাদান করছেন।
২৪। জনাব পংকজ কান্তি আইচ, সফল শিক্ষক যিনি ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ এ ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
২৫। জনাব কিশোর কান্তি বিশ্বাস, মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নকল্পে বিদ্যালয়ে সকলের সততা, নীতি ও নৈতিকতার অনুশীলনে তাঁর উদ্যোগের পাশাপাশি দক্ষতার জন্য এসএসসি শিক্ষার্থীদের শতভাগ পাশসহ সততা স্টোর পরিচালনায় সফলতা অন্যদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে।
২৬। শেখ হাবিবুল দেশ, মেধা ও সৃজনশীলতার জন্য জাতীয়ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
২৭। জনাব সোহানুজ্জামান খান, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়া সংগঠক ও সাংবাদিক যিনি সকল বয়সী মানুষকে খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব ড. শ্রী বীরেন শিকদার, মাননীয় সংসদ সদস্য, মাগুরা-০২, এমপি এমন চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য মাগুরা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন যে, ভালো কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা হলে সমাজের অন্যরাও উৎসাহিত হবেন। এ ধরনের উদ্যোগ স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন এবং স্মার্ট সোসাইটি গঠনের পথে সহায়ক হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন যে, সহমর্মিতা ও অংশগ্রহণমূলক মানবিক সমাজ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে নাগরিকদের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করার জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।একই সাথে সমাজের সকল স্তরের জনসাধারণের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে উত্তম কাজের অনুশীলন করা সকলের নাগরিক দায়িত্ব। তিনি আরও জানান, এই ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক অনুপম পরিবেশ সৃষ্টি  হতে পারে এবং সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জনকল্যাণমুখী মাগুরা গঠনের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। জেলা প্রশাসক আরো প্রত্যাশা করেন যে, তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভালো কাজের এ ধারা অব্যাহত রাখবেন যাতে সমাজের অন্যরা তাঁদের দেখে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়।
উল্লেখ্য যে, জেলা প্রশাসন মাগুরার উদ্যোগে ভালো কাজের নাগরিক অনুশীলনের স্বীকৃতিস্বরূপ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ১১৩ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আ ফ ম আব্দুল ফাত্তাহ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা দপ্তর, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দসহ অন্যান্য সুধীজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here