আজ বিশ্ব ‘মা‘ দিবস। ‘মা‘ দিবসে প্রতিটি ছেলের প্রতিজ্ঞা হোক নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া

0
0

সমাজের কন্ঠ ডেস্ক – মা দিবসে প্রতিটি ছেলের প্রতিজ্ঞা হোক নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

একই পরিবারে জন্ম নিয়ে এক ছেলে এবং এক মেয়ে পাচ্ছে ভিন্নভাবে যত্ন। একজনকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে নম্র-ভদ্র হতে এবং নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হতে। অন্যদিকে, শক্তি প্রয়োগ ও ক্ষমতা দেখানোর জন্যে প্রশংসা করা হচ্ছে অপরজনকে।

শত শত বছর ধরে মেয়ে ও ছেলে শিশুদের বিচরণের ভিন্ন সীমা টানা হয়েছে। মেয়েদের শেখানো হচ্ছে বিনয়ী হওয়ার। আর ছেলেদের দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা। ঘরে-বাইরে নারীদের ওপর সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে এমন শিক্ষাকেই সম্ভবত দায়ী করা যায়।

পেশাগত জীবনে সফল এবং ছেলে-মেয়েদের কাছে আদর্শ বেশ কয়েকজন মা এমন ভাবনা প্রকাশ করেছেন। মা দিবস উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারকে তারা জানিয়েছেন তাদের ভাবনার কথা।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে ধারণাটি গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে রয়েছে তা হলো ছেলে ও মেয়েদের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। তাই প্রথমেই এর মূলোৎপাটন করতে হবে। এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। পরিবার ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদেরকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার শিক্ষাটি ছেলেদেরকে পরিবার থেকেই দিতে হবে।

একটি আন্তর্জাতিক কোমলপানীয় প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অংশের জনসংযোগ বিভাগের একজন পরিচালক শামীমা আখতার বলেন, যে সমাজে ছেলেদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয় সেই সমাজে তার ১২ বছরের ছেলের তুলনায় তার আট বছরের মেয়েকে অনেক বেশি বাধার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শামীমা বলেন, “আমার মেয়েকে জানতে হবে কীভাবে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। কিন্তু, তারও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে আমার ছেলেকে জানানো উচিত কী ধরনের সমস্যা আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে এবং তার বোনকে মোকাবিলা করতে হবে। যাতে আমার ছেলে নারীদের শ্রদ্ধা করতে শেখে। পরিবার ও সমাজে নারীদের অবদানের কথা অনুধাবন করতে পারে।”

তার ছেলে বয়ঃসন্ধিকালের দিকে যাচ্ছে। শামীমা মনে করেন, এখনই ছেলের সঙ্গে কথা বলার সময়। তাকে জানতে হবে কী কী ধরনের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে এবং তার মেয়ে সহপাঠীরা যাবে।

শামীমা বলেন, মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তাদেরকে নিয়ে তামাশা-মস্করা করা হয়। “আমার ছেলের জেনে রাখা উচিত যে তার মাও এসব পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন এবং তার বোনকেও পড়তে হবে। শারীরিক পরিবর্তনতো সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক বিষয়। এ নিয়ে কোনো মেয়ের লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই।”

ছেলের সঙ্গে এমন আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শামীমা।

মায়ের চেষ্টাতেই তার ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে বক্সিং শিখতে যায়। তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে আমি আমার ছেলেকে শিক্ষা দিতে চেয়েছি যে ‘তুমি ভেবো না যে শারীরিক কারণেই একজন শক্তির অধিকারী হয়’। আর মেয়েকে শেখাতে চেয়েছি: ‘ভেবো না যে তুমি দুর্বল’। সে কারণেই তাদেরকে একসঙ্গে বক্সিং শিখতে দিয়েছিলাম।”

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং দুই সন্তানের জননী শারমীন ইসলাম ঘরে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য করতে নিরুৎসাহিত করেন।

তিনি বলেন, “আমার মেয়ে উঠতি বয়সের আর ছেলের বয়স পাঁচ বছর। শিশু হিসেবে এখনো দুজনের অবস্থাই সমানভাবে নাজুক।” তার মতে, তাদের মা হিসেবে তার দায়িত্ব রয়েছে সন্তানদের অপরের সম্মতির বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার।

“আমার ছেলে-মেয়ে দুজনকেই যে শিক্ষাটি দিতে চাই তা হলো তারা যেনো কারো প্রতি বৈষম্য তৈরি না করে। প্রতিটি মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না।”

গত কয়েক দশকে দেশে লিঙ্গ-বৈষম্য কীভাবে বদলে গিয়েছে সে বিষয়টি তুলে ধরে শারমীন বলেন, “যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন মেয়েদের বাইরে কাজ করতে যাওয়াটি তেমন দেখা যেতো না। তখন ধারণা ছিলো যে মেয়েরা ঘরের কাজ করবে। আর ঘরের কাজে ছেলেদের কোনো অবদান থাকবে না।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, কর্মস্থলে নারীদের অংশগ্রহণ এখন ৩৬ শতাংশ। ১৯৯০ সাল এই অংশগ্রহণ ছিলো ২৩ শতাংশ।

কর্মজীবী নারীদের কর্মস্থল ও পরিবার সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই ঘরের কাজে পুরুষদের সহযোগিতা করা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শামীমা মনে করেন, যেহেতু ছেলেরা অনুকূল পরিবেশে বেড়ে উঠে, তাই তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে মেয়েদের প্রতি কোনটি জুলুম, অত্যাচার বা বিরক্তিকর।

২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি বন্ধ করতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে একজন নারীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। এধরনের কমিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে শামীমা বলেন, এসব কমিটির অনেক পুরুষ বুঝতেই পারেন না যে- কেনো মন্তব্য বা বার্তা কারো মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর মূলে রয়েছে পারিবারিক শিক্ষা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় শাহিদা নামের একজন পোশাককর্মী জানান যে তিনি তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তার মতে, “পুরুষদের সঠিকভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।”

এই পরিবর্তিত সময়ে একজন নারীকে মায়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এখন একজন নারীকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মীও। তার হাতে আলোকিত হচ্ছে সমাজ।

শারমীন যেমন বলেছেন, “মানুষ মনে করে যে ছেলেরা তাদের বাবার দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু, আজকাল একজন মাও হয়ে উঠছেন অনুসরণীয়।”

আজকের ছেলেরা আগামী দিনের পুরুষ। তাই লিঙ্গ-বৈষম্য ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে তাদের অবদান একটি সমতাপূর্ণ সমাজ গড়তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here