বেনাপোল হয়ে ভারতে যাওয়া ট্রাভেল বাসে মিলল ৩০টি স্বর্ণের বার, বাস জব্দ

0
0

নাজিম উদ্দীন জনিঃ ঢাকা-কোলকাতা ও আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সরাসরি চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলোর বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা ও কোলকাতার চোরাচালানীরা। বাসগুলো সরাসরি ঢাকা-কোলকাতা চলাচল করায় বর্তমানে চোরাচালানীদের নিরাপদ বাহনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এসব বাসে করে লাখ লাখ টাকার চোরাচালানী পণ্য আনা নেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি বাস সার্ভিসের স্টাফরা ডলার, টাকা, স্বর্ণসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই সীমান্তে চুক্তির মাধ্যমে চলছে এ ব্যবসা। বাসের কেবিন, চালকের সিটের নীচসহ বিভিন্ন স্থানে আলাদা বক্স বানিয়ে এসব মালামাল পাচার করে থাকে।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বেনাপোল চেকপোস্টের বিপরীতে ভারতে পেট্রাপোল চেকপোস্টে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া কলকাতাগামী এন আর ট্রাভেলস শ্যামলী বাস থেকে ৩০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে ভারতীয় বিএসএফ এর ডগ স্কোয়াড বাহিনী। যার বাজার মূল্য দুই কোটি রুপি বেশি। জব্দ করা হয় বাসটি। আটক করা হয় বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে। তল্লাশির সময় পালিয়ে যায় বাসের হেলপার।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৬টি বাস কলকাতা-ঢাকা ও আগরতলা-ঢাকা-কলকাতার মধ্যে সরাসরি যাতায়াত করে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় এন আর ট্রাভেলস শ্যামলীর দুইটি, টিআরটিএ (রয়েল) এর একটি, গ্রীণ লাইনের একটি ও সৌহার্দ্য পরিবহনের দুইটি যাত্রীবাহী বাস বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সরাসরি চলাচল করে থাকে। তবে সৌহার্দ্য এর দুইটির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ করে এনআর শ্যামলী ও অপরটি গ্রীণলাইন পরিবহন। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বিভিন্ন পরিবহনের আরো কয়েকটি বাস চলাচল করছে। তবে এগুলো সরাসরি নয়। কাটা গাড়ি হিসাবে পরিচিত। এসব বাসের যাত্রীরা বেনাপোল নেমে ওপার থেকে আবার ভারতীয় বাসে উঠে থাকে বলে এদের কাটা গাড়ি বলা হয়। ল্যাগেজ পার্টি নামধারী একশ্রেণীর ভদ্রবেশি চোরাচালানীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মালামাল পাচার করছে এসব পরিবহনের মাধ্যমে। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের কর্মকর্তাদের সাথে রয়েছে এদের অবৈধ অর্থের লেনদেন। আর এসব করে থাকে অফিসের স্টাফ, বাসে থাকা সুপারভাইজার ও ড্রাইভাররা। এদের কাজগুলো দ্রুত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে থাকে যাত্রীদের কাছ থেকে।

এদেশ থেকে যেসব পণ্য পাচার হয়ে ভারতে যাচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, নগদ টাকা, ডলারসহ বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইলেকট্রনি´ সামগ্রী। অপরদিকে ভারত থেকে এদেশে আসছে ভারতের সোনার তৈরি বিভিন্ন অলংকার, মোবাইল সেট, প্রসাধনী সামগ্রী, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, শার্টিং, বিছানা চাদর, বাচ্ছাদের জামা কাপড়, ইমিটেশন সামগ্রী, ক্রোকারিজ ও নেশা জাতীয় বিভিন্ন প্রকার ওষুধ। বেনাপোল চেকপোস্টে কাস্টম ও বিডিআর সদস্যরা যৌথ ভাবে প্রতিদিন এসব বাসে ও যাত্রীদের ব্যাগ নামিয়ে তল্লাশী চালাচ্ছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। লাখ লাখ টাকার চোরাই পণ্য আটকও করছেন। তার পরও কমছে না চোরাচালানী। পথে পথে এই বাস থামিয়ে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক তলাশির কারণে সাধারন যাত্রীরা মাঝে মধ্যে নাজেহাল হতে হচ্ছে।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে আগরতলা থেকে ছেড়ে আসা কলকাতাগামী এন আর ট্রাভেলস শ্যামলীর ঢাকা (মেট্রো-১২-০৪৮৭) একটি বাস বেনাপোল চেকপোস্টে তল্লাশির পর ভারতে প্রবেশ করে। পেট্রাপোল চেকপোস্টে পৌছানোর সাথে সাথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাসটি ঘিরে ফেলে পেট্রাপোল ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। পরে বিএসএফের ডগ স্কোয়াড বাহিনীর সদস্যরা বাসটিতে তল্লাশি করে ৩০টি স্বর্ণের বার (ওজন ৩ কেজির বেশি) উদ্ধার করে। বাসের লাগেজ বগির ভেতর একটি ব্যাগ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার হয়। আটক করা হয় বাংলাদেশের নাগরিক বাসের চালক মো: ফরহাদ ও সুপারভাইজার ওমর ফারুককে।

জিজ্ঞাসাবাদ তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে বলেন দীর্ঘদিন থেকে তারা এ ধরনের চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের পেট্রাপোল থানায় সোপর্দ করা হয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কলকাতার নিউমার্কেটের মো: জামাল নামে এক ব্যক্তির কাছে ওই স্বর্ণ নিয়ে আসা হচ্ছিল। বনগাঁ থেকে ট্রেন পথে শিয়ালদহ এবং সেখান থেকে গাড়িতে নিউমার্কেট আসার কথা ছিল। নিউমার্কেট থেকে এই স্বর্ণ সরাসরি মুম্বাইতে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল।

এ ব্যাপারে বিজিবির কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে চাননি। যেহেতু স্বর্ণের চালান ভারতের মধ্যে আটক হয়েছে সে কারণে তারা কিছুই বলতে পারছেন না।
এদিকে স্বর্ণ আটকের পর পরই বেনাপোল চেকপোস্ট এন আর ট্রাভেলস শ্যামলীর কাউন্টারের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে বলে চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here