দেশে বেকার তৈরীর কারখানা ছাত্র রাজনীতি – রব্বানী

0
0

আল আমিন জনিঃ সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের পরিচালক (হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) পদে যোগদান করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী। তার এই যোগদানে প্রথাগত রাজনীতিতে একটা নতুন ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

দীর্ঘ ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্ররাজনীতি তথা ছাত্রসংগঠনগুলো সম্পর্কে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের দেশের বর্তমান ছাত্রসংগঠনগুলো দিন দিন বেকার তৈরির কারখানায় পরিনত হচ্ছে, আর বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বেকার তৈরির কারখানার নাম ছাত্রলীগ।

আর ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী হিসেবে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে,আমার ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের জন্য যথাসম্ভব কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

আমি যেহেতু এই সংগঠনটি করে এসেছি এবং মন থেকে ওন করি, বর্তমানে এবং সামনের দিনে আমি তাদের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে বেশ চিন্তিত। দেখুন, ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের কর্মমুখী, জীবন ধর্মী কিছু শেখানো হয় না, কেবল মাথা গোনা রাজনীতিতে, টয়লেট টিস্যুর মতো প্রয়োজনে ব্যবহার করে ছেড়ে দেওয়া হয়, ছুঁড়ে ফেলা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ, পার্টি অফিসে নেতাদের প্রটোকল ও দল ভারী করার জন্য আমি তাদের নিচ্ছি, মাসেল ও ম্যান পাওয়ার হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার করছি, কিন্তু দিন শেষে তার ২৯ বছর চাকরির বয়স, সেটা চলে যাচ্ছে, ছাত্রলীগের বয়সও ২৯। তখন সে চাকরিও পাচ্ছে না, পদও পেল না। তখন সে সমাজের, পরিবারের জন্য বড় বিপদ, আপদ হয়ে গেল—সম্পদ না হয়ে। তারা শুধু ব্যবহার করছে, তাদেরকে প্রোডাক্টিভ, কন্সট্রাকটিভ, পজিটিভ কাজে ব্যবহার করছে না, কর্মজীবনে কাজে লাগবে এমন কিছু শেখাচ্ছে না।’

প্রশ্ন তুলে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কী কর্মসংস্থান সম্পাদক আছে না? যুবলীগে আছে, ছাত্রলীগে আছে। কর্মসংস্থান নিয়ে তারা কী কোন কাজ করেছে? একটা উদাহরণও আমার কাছে নেই। তাই আমরা ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি) এই কাজ করতে চাই। বিশাল এই বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আলাদাভাবে কাজ করার দারুণ সুযোগ আছে। শীঘ্রই আমাদের প্লাটফর্ম থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু স্কিল ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।’

নতুন চাকরিতে যোগদানের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রাব্বানী বলেন, ‘আমি এখানে জয়েন করার পরে গত ১০ দিনে অন্তত ১০০০ সিভি আসছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকে দেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা, বা দুই একজনের…। কিন্তু তাদের আমি কোথায় দেবো? তারা আসলে কী জানে, কী পারে? একটা প্রাইভেট সেক্টরে বুঝতে হবে, আমাকে বা যাকে নেবে, তার কাছ থেকে ৫ টাকা আয় নিশ্চিত করতে পারলে, সেই ৫ টাকা থেকে তাকে ১ বা ২ টাকা দেবে, দিস ইস দ্য থিউরি। তো আমাকে কনভিন্স হতে হবে যে, তাকে দিয়ে আমি ৫ টাকা আয় করতে পারবো। সেটা আমি কীভাবে নিশ্চিত করবো? ১০ জন আবেদন করেছে, ১০ জনই তো অনার্স-মাস্টার্স করা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের মেইন ম্যাসেজটা হচ্ছে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, যেটা এখন বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জানা দরকার। ডিজিটাল মার্কেটিং/ সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, Google SEO, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, মোশন গ্রাফিক্স, 2D, 3D ডিজাইনিং, যেগুলো এখন আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। এখন তো সবাই অনলাইনে আসছে, প্রত্যেকটি সেক্টরে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই জায়গায় আমাদের ছেলেমেয়েদের বিরাট একটা শূন্যতা পরিলক্ষিত। খুবই গুটিকয়েক ছেলমেয়ে নিজের থেকে চেষ্টা করে এগুলো শিখছে কিন্তু বাদবাকি সবাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে, নিজেকে স্কিলড বা দক্ষ হিসেবে প্রস্তুত না করেই মিছে চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছু ছুটছে…

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘কিছু দিন আগে জনৈক ব্যবসায়ী দেশে কোন শিক্ষিত বেকার নেই বলে মন্তব্য করায় অনেকে বিদ্রুপাত্মক ট্রল করেছেন, কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি একদম রিয়াল মনে হয়েছে। আমাদের দেশে বেকার অনেক, কিন্তু শিক্ষিত বেকার একজনও নেই। অর্থাৎ সুশিক্ষায় শিক্ষিত, কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার একজনও নেই। আমার কাজের জন্য এখন ভালো মানের ডিজিটাল মার্কেটার, গ্রাফিক্স ও মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনার দরকার। আমি তাকে ৫০ হাজারের ওপরে বেতন দেবো, কিন্তু আমি পাচ্ছি না। অর্থাৎ আপনি যদি ভালো মানের ডিজিটাল মার্কেটার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার তৈরি করতে পারেন যেকোনো কোম্পানিতে ৫০ হাজারের ওপরে বেতন আছে। আপনি ভালো কোয়ালিটির ডিজিটাল মার্কেটিং জানেন, ৫০ থেকে ৮০ হাজার বা লাখের ওপরে বেতন আছে। আমার কোম্পানি বা প্রোডাক্টটাকে সফল ও কার্যকর ব্রান্ডিং করতে দক্ষ জনবল খুবই কম বাংলাদেশে।’

দলীয় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাব্বানী বলেন, ‘প্লিজ আপনি চাকরির জন্য সিভি নিয়ে আসার আগে নিজেকে তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর পরিশুদ্ধ করেন, নিজেকে সেভাবে তৈরি করেন— একটু কষ্ট হলেও। আগে নিজেকে প্রশ্ন করেন, আপনাকে একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, একটা টিভি চ্যানেল বা জাতীয় দৈনিক কেন এবং কোন কাজে নেবে, কেন এত টাকা বেতন দেবে, আপনি তাকে ঠিক কি কি সার্ভিস দিতে পারবেন? অনার্স-মাস্টার্স তো সবাই করছে, তো সেটা দিয়ে আমি তাকে কী কাজে লাগাব? এটা অনেক বড় একটা প্রশ্ন, এটা নিয়ে বাস্তবিক সমস্যায় আমি পড়েছি। প্রত্যেককেই একই কথা বলছি, বারবার। ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স, 2D, 3D, এনিমেশন, আইটি রিলেটেড অন্যান্য সেক্টরে নিজেকে দক্ষ ও সমৃদ্ধ করুন। আর সময় থাকতে, খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে

পুঁথিগত,গতানুগতিক সার্টিফিকেট সর্বস্ব বিদ্যার পাশাপাশি এসব এক্সট্রা কারিকুলাম স্কিল ডেভলপমেন্ট অত্যন্ত জরুরি, এটা জাতীয়ভাবে সবার কাছে, বিশেষত হতাশাগ্রস্ত শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর সামনে তুলে ধরা উচিত, যেন তারা নিজেদের নতুনভাবে প্রস্তুত করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here