দক্ষিনবঙ্গের গর্ব অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা মরহুম শাহ হাদিউজ্জামান।

0
16

ড, শেখ শাহরিয়ার আহমেদ (সম্পাদক) – দক্ষিনবঙ্গের বরেণ্য রাজনীতিক এবং সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও অবিসংবাদিত নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা মরহুম শাহ হাদীউজ্জামান। যিনি ১৯৩৯ সালের ১০ মার্চ যশোর জেলার অভয়নগর থানার নওয়াপাড়ার এক ইসলামিক ঐতিহ্যবাহী পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইরানী পীর, কামেল দরবেশ আধ্যাত্মিক জগতের সাধক খাজা আব্দুল মজিদ শাহ।বন জঙ্গলে ঘেরা ভৈরব নদের তীরে তার পিতামহ মুহাম্মদ আলী শাহ ইরানের সিস্তান প্রদেশ থেকে এসে নওয়াপাড়ায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এক সময় তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এলাকাটির নামকরণ করা হয় ‘আলী নগর’। মরহুম শাহ হাদীউজ্জামান ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং সেই থেকে রাজনীতির অনেক বাধাবিঘ্ন পথ পাড়ি দিয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে এ স্বর্ণময় পদটি স্বমহিমায় সুনামের সাথে অলঙ্কৃত করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকে দলের জন্য গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলর, ১৯৭২ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৩ সালে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৭-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য স্মরণযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতের দেরাদুনে মুজিববাহিনী (বিএলএফ) ফোর্সের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ঘোষপুরের ইয়েথ ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকরা তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়; এমনকি তার প্রাদেশিক পরিষদের সদ্য পদও খারিজ করে দেয়। পাকিস্তান সামরিক আদালত এ বীর যোদ্ধাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। তিনি মুজিবনগরের বাংলাদেশ প্রাবসী সরকারের গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নওয়াপাড়া তথা যশোরের এ কৃতী সন্তান ১৯৭০ সালে অভয়নগর-বাঘারপাড়া আসন হতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে একই আসন হতে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৮৬ সালে তৃতীয়বার, ১৯৯১ সালে চতুর্থবার এবং ১৯৯৬ সালে পঞ্চমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি নওয়াপাড়া রোটারি ক্লাবের পাস্ট প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণ এই নেতাকে যশোর জেলা পরিষদের প্রশাসক মনোনিত করেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ১১জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলা পরিষদে প্রথম সভা করেন।মারা যেয়েও তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে হৃদয়ের মানুষ হয়ে থাকবেন আজীবন।

মহান আল্লাহপাক উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমীন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here