শার্শায় ৩৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ। স্বজনদের দাবী কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে অসুস্থ্

0
0

জনি আহমেদ (শার্শা) – যশোর জেলার শার্শা উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের ৩৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্বজনদের দাবী কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তবে চিকিৎসরা বলছে কৃমিনাশক ওষুধের প্রভাবে তারা অসুস্থ হয়নি। আহতরা সকলেই শার্শা উপজেলার পাকশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১০জনকে যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ করা হচ্ছে, কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কৃমিনাশকের প্রভাবে তারা অসুস্থ হয়নি, ম্যাস হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অসুস্থদের মধ্যে দশজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে, ছয়জনকে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বাদবাকিদের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা হচ্ছে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির তামান্না ইয়াসমিন মিম (১৪), হালিমা (১৪), রাসেল (১৪), তাবাসসুম হাবিব ঋতু (১৪), রিমা (১৪), ষষ্ঠ শ্রেণির আলিফা ইয়াসমিন (১২), জান্নাতুল (১৩), শাহরিয়া ইয়াসমিন নিশি (১২), সপ্তম শ্রেণির মুন্নি (১৪) ও দশম শ্রেণির স্মৃতি (১৫)।

অসুস্থ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক শামসুন্নাহার, সালেহা বেগম, আব্দুল মজিদ, হাবিবুর রহমান, সাদিকুল ইসলাম জানান, তিনদিন আগে পাকশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক খাওয়ানো হয়। ওষুধ খাওয়ার পর বাচ্চারা অসুস্থ বোধ করতে থাকে। বুধবার সকাল থেকে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিভাবকদের মধ্যে শামসুন্নাহার অভিযোগ করে বলেন, ‘এতো ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লো। অথচ প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের কোনো মাথা ব্যথা নেই। যেন কোনো কিছুই ঘটেনি। পরে বাধ্য হয়ে আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিবকে ফোন দেই। তিনি গাড়ি পাঠালে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

স্কুলের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘কৃমির ওষুধ সেবনের কারণে এঘটনা ঘটেনি। কী কারণে ঘটেছে, তা আমার জানা নেই।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার এম আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এটি একটি রোগ- ম্যাস হিস্টিরিয়া। মূলত ছেলে-মেয়েরা অসুস্থ হয়েছে আতঙ্কে। কৃমিনাশক ওষুধ সেবনে এঘটনা ঘটার কোনো কারণ নেই। অসুস্থরা সবাই শঙ্কামুক্ত আশা করা যায়।’

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার অশোককুমার সাহা বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তাদের সবাই ভালো আছে।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি কৃমিনাশক খাওয়ানো হয়েছে গত ৬ এপ্রিল সকালে। ওই ওষুধে যদি প্রতিক্রিয়া হয়, তা ১২ ঘণ্টার মধ্যে হতো। সেহেতু এটা আতঙ্কের কারণে হতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. অশোক সাহা বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা সবাই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে বাড়ি থেকে বের হয়। অনেকে পান্থাভাত খেয়ে বাড়ি থেকে আসে। পান্তাভাতে পেটে অ্যালকোহল সৃষ্টি হয়। মাথা ঝিমঝিম করে। এক-দুইজন মাথা ঘুরে পড়েছে। বাকি সবাই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কোনো ছেলে-মেয়ের অসুবিধা হবে না।’

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার বলেন, ‘আমি খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সবাইকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহাদয়ের নলেজে আছে বিষয়টি। আমি নিজে হাসপাতালে যোগাযোগ রাখছি।’

শার্শা থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) তাসমিম বলেন, আমি খবর শুনে স্কুলে ছুটে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here