বাংলাদেশ – মায়ানমার যুদ্ধের সম্ভাবনা ও হুমকির মুখে আমাদের সার্বভৌমত্ব

0
0

ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ বাংলাদেশ-মিয়ানমার যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটুকু? যুদ্ধ বেধে গেলে কে বিজয়ী হবে? যদিও এই যুদ্ধের আশঙ্কা খুব ক্ষীণ। তবুও বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ কিছুদিন যাবত মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরের বিদ্রোহীদের দমনের জন্য সামরিক অভিযান শুরু করেছে তাতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা অতিক্রম করে করেছে বার বার। এটা ছাড়াও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মর্টার সেলও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে আছড়ে পড়েছে। এতে করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

🛑 বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাতে মিয়ানমারের অপতৎপরতা:

➡️বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতি যে রূপ আচরণ করেছে তা দেখে বোঝাই যায় মিয়ানমার ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে বড় কোন সংঘাতে যেতে প্রস্তুত। তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সামরিক বাহিনীকে উন্নত করে চলেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের সিংহভাগের যোগানদাতা রাশিয়া এবং চীন। এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে চাপে ফেলানোর জন্য এখন ভারতের সাথেও সামরিকভাবে সুসম্পর্ক গঠন করছে। মিয়ানমার ভারত থেকে সাবমেরিন গ্রহণ করেছে, আকাশ মিসাইল সিস্টেম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। মিয়ানমার ভালো করে জানে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ভারতীয় অস্ত্র ক্রয় করতে কখনোই ইচ্ছুক নয়। তাই তারা ভারতের সাথে অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে পাশে রাখতে চাইছে।

🛑 মিয়ানমারের সামরিক শক্তি আর বাংলাদেশের সামরিক শক্তির পার্থক্য কোন জায়গায়:

➡️ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে ে সরাসরি হামলা করার সাহস দেখাবে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রায় ডজনখানেক স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে। যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তবে সেটা মিয়ানমারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

মিয়ানমারের লক্ষ্য বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধে গেলও সে যুদ্ধটি হবে সংক্ষিপ্ত আকারের‌ এবং এতে তারা তাদের বিমান বাহিনীকে ব্যবহার করে যতটা সম্ভব বাংলাদেশের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরকে তারা টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করবে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির সবথেকে বড় উৎস। মিয়ানমার খুব ভালো করেই জানে বাংলাদেশের বিমান বাহিনী মিয়ানমারের তুলনায় দুর্বল এবং সেকেলে। বাংলাদেশের ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশনের কোন যুদ্ধবিমানই নেই। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া থেমে রয়েছে। অথচ ঠিক এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার রাশিয়ার কাছ থেকে সুখোই-৩০ বিমান কিনেছে। চীনের কাছ থেকে নিয়েছে জেএফ ১৭ থান্ডার। ভাবতে অবাক লাগে এই ক’ বছরে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে অথচ আমরা আমাদের দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে ২ স্কোয়াড্রন বিমান কিনতে পারি না।

🛑 যুদ্ধ বেধে গেলে কে বিজয়ী হতে পারে?

➡️বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী মিয়ানমারকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং নৌ বাহিনী উভয়ই প্রফেশনাল, প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ। মিয়ানমার যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিকল্পনা করে তাহলে মিয়ানমারের নিশ্চিত পরাজয় হবে। কারণ মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী গেরিলা সংগঠনগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে দুটি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব হবে না। তবে যুদ্ধ যদি স্বল্পস্থায়ী হয় এবং মিয়ানমার তার বিমান বাহিনীকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে তাহলে বাংলাদেশের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here