অভয়নগরের এক বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত জনপদ “বেদভিটা” গ্রাম

0
0
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধিঃ “বেদ ভীটা” হলো যশোর জেলার অন্তর্গত অভয়নগরের এক বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত জনপদ।  চরম অবহেলিত এই গ্রামটির অবস্থা চোখে না দেখলে ঠিক বুঝা যায় না – এর প্রকৃত অবস্থা।
এখানে বিবাহ যোগ্য পাত্রের পৈতৃক বাড়ি আছে। চাষযোগ্য জমি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে রয়েছে কয়েক লাখ টাকা। নিজেও কাজ করেন। তবুও সেই যুবক কে পাত্রস্থ করতে হিমসিম  খাচ্ছে পরিবার। এমন সমস্যায় পড়েছেন বহু বিবাহযোগ্য যুবক এর পরিবার । এর কারণ আর কিছুই নয়— গ্রামের অবস্থা!
একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ছেলের বয়স হয়েছে ৩০ বছর। সেই ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। পাত্রীপক্ষ শর্ত দিয়েছে, ওই গ্রাম ছাড়লে তবেই হতে পারে বিয়ে। বিয়ের জন্য কি শেষে ভিটেমাটি ছাড়তে হবে? হ্যাঁ, এ রকম সমস্যায় পড়েছেন বেদভিটা  গ্রামের যুবকরা।
বেদভিটা  ‘আজব’ গ্রাম। এমন গ্রামের কোনো পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হচ্ছে না বহু পরিবার। কিন্তু গ্রামের জন্য কেন বিয়ে হবে না? এই অবস্থার জন্য গ্রামের পরিকাঠামোকে দায়ী করছেন গ্রামের বাসিন্দারা। ভৌগোলিক ভাবে প্রত্যন্ত এলাকা। তার উপর রাস্তা নেই, নেই পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। প্রায়শই বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটে। ‘‘কে-ই বা আসবেন এই গণ্ডগ্রামে’’— আক্ষেপের সুরে বলছেন ২৭ পেরোনো এক  যুবক।এই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল,  সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ছিটেফোঁটা সুবিধাও এখানে পৌঁছায়নি। কারণ অধিকাংশই বাড়িই কাঁচা। পুরুষদের পেশা বলতে মূলত চাষবাস এবং পশুপালন। এর বাইরে বেরোতে পারেননি প্রায় কেউই।
শিক্ষার ব্যবস্থাও তথৈবচ। একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়   আছে বটে,। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের কারণে ধুঁকছে সেই স্কুল। এলাকার সিংহভাগ ছেলেমেয়ে ওই স্কুলটিতে পড়াশোনা করে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরোলে অন্য গ্রামে কাদা মাটির রাস্তা দিয়ে / নৌকায় করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় ছাত্র ছাত্রীদের। স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে কিছুই নেই। আপদকালীন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটাও নেই। রাতবিরেতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপাকে পড়েন এই গ্রামের মানুষজন।
সারা গ্রাম ঘুরে একটি কংক্রিটের রাস্তাও চোখে পড়বে না। এসব কারণে ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষজন।
গ্রামের এক মহিলা বলেন‘‘ছেলের বিয়ে দিতে পারছি না। কৃষিজমি-সহ অন্যান্য যা কিছু আছে তাতে দিন গুজরানে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু গ্রামের নাম শুনলেই মুখ ফেরাচ্ছে সবাই।’’
বেদভিটা গ্রামের জৈনেক ব্যাক্তি বলেন  ‘‘আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট একদম ভালো নয়। ভাঙাচোরা রাস্তা নিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যায়। অধিকাংশই এ দিকে আসতে চায় না।’’ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই গোটা এলাকাই যেন অঘোষিত ভাবে সামাজিক বয়কটের শিকার! দূর গ্রামের কোনো পরিবারই এই এলাকার লোকজনের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। সারা বছর পানিতে তলিয়ে থাকে ঘর বাড়ি, রাস্তা ঘাট।
 এই অবস্থার কি পরিবর্তন কি  হবে? উত্তর খুঁজছে বেদভিটা গ্রামের   মানুষজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here