আটকৃতরা হলেন, যশোরের কাঠালতলা রায়পাড়ার এমএম শামসুর রহমানের ছেলে এমএম রুবেল হাসান বাবু (৩৩), অভয়নগরের গুয়াখোলা প্রফেসরপাড়ার মৃত মানিক মোল্যার ছেলে আকাশ মোল্যা (২৪), বুইকারা গ্রামের মালেকের চাতাল সংলগ্ন মুজিবর হাওলাদারের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫), পাঁচকবর এলাকার মৃত গণি সরদারের ছেলে আব্দুল মালেক (৩২), শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের মাজেদ খানের ছেলে ইমরুল খান (২৮) ও একই গ্রামের জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগম (২৫)। পলাতক আছে অভয়নগরের সরখোলা গ্রামের এফ এম সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে বহু হত্যা মামলার আসামি শাকিল (৩২), আকাশ (২৫) ও সোহেল (২৮) পিতা অজ্ঞাত।
এজাহার সূত্রে জানাযায়, ইকবাল জাহিদ রোববার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় ঋণ প্রদান কাজে জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগমের বাড়িতে যায়। ঋণ প্রদানে জটিলতা দেখা দিলে কনা বেগমের ভাই ইমরুল খান স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে ইকবাল জাহিদকে আটকে রাখে। পরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। দাবীকৃত চাঁদার টাকা অভয়নগরের তালিকাভুক্ত বহু মামলার আসামী এম এম রুবেল হাসান বাবুর নিকট দিতে বলে। টাকা পরিশোধ না করলে ইকবালকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
এ সময় ইকবাল তার প্রতিষ্ঠানের জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এরশাদুলকে বিষয়টি অবহিত করলে বিকালে রুবেলের কাছে এরশাদুল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পৌঁছে দেয়। কিন্তু অপহরণকারীরা আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় ইকবালকে একটি সাদা রঙের হাইএস মাইক্রোযোগে ইছামতী গ্রাম থেকে নওয়াপাড়া বাজারের সোহাগ কাউন্টারে অপহরণ করে নিয়ে আসে। ওই কাউন্টারের ভিতরের নিয়ে টাকা পরিশোধে চাপ দিতে থাকে এবং মারপিট শুরু করে। পরে রাত ৯ টার দিকে তাকে উপজেলার পাঁচকবর এলাকায় মৃত গণি সরদারের ছেলে আব্দুল মালেকের বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য ইকবালের স্ত্রী সালমাকে ফোন করে অপহরণকারীরা। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।
এক পর্যায়ে ইকবাল রক্তাক্ত জখম হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় অপহরণকারীরা আহত ইকবালকে ওই মাইক্রোবাসে করে যশোরের কাঠালতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আদায়কৃত ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ১০ জন অপহরণকারী নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে ইকবালকে নিয়ে অভয়নগরের সরখোলা গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে সিদ্দিকের ছেলে শাকিলের নের্তৃত্বে বিলের মধ্যে একটি গাছের সাথে ইকবালকে বেঁধে রাখে এবং অপহরণকারীরা বাকি টাকার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সালমাকে আসতে বলে।
এদিকে ইকবালের স্ত্রী সালমাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলামকে অবহিত করলে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। বাকি টাকা পৌঁছে দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইকবালের স্ত্রীর সাথে সাদা পোষাকে পুলিশ অবস্থান করে। রাত আনুমানিক ৩ টার সময় অপহরণকারী দলের এক সদস্য রবিউল ইসলাম মুক্তিপনের টাকা নিতে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপহৃত ইকবাল জাহিদকে সরখোলা বিলের মধ্য থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
এ সময় অপহরণকারী দলের মুলহোতা রুবেলকে আটক করলেও শাকিল ওই সময় দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কনা বেগমসহ আরো চারজনকে আটক করে। এঘটনায় সোমবার (২ নভেম্বর) দুপুরে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অপহৃত ইকবাল জাহিদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় ১১ ঘন্টার অভিযান শেষে এক নারীসহ ৬ জন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপনের ১৫ হাজার টাকা, একটি চাকু ও অপহৃত এনজিও কর্মকর্তা ইকবালের মোটরসাইকেল। বাকি আসামি আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।