সমাজের কণ্ঠ ডেক্স :২৮ জুন, ২০১৯ –
চীনা সরকারের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করবেন। তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের মধ্যে মোট আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২ ও ৩ জুলাই চীনের দালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং বাংলাদেশ ও এশিয়ার সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন। এরপর ৫ জুলাই পর্যন্ত বেইজিংয়ে অবস্থানকালে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ চীনকে কী বলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জনগণ। শুধু মুসলমান নয়, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যরাও নিপীড়িত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের জন্য তাদের আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকলে পুরো অঞ্চলে উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে চীনের যে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তা ব্যাহত হবে। এছাড়া উগ্রবাদেরও উত্থান হতে পারে। চীনকে এই বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন মিয়ানমারকে মদদ দিচ্ছে-এটি আমরা বিশ্বাস করি না। চীনের একটি অবস্থান আছে। তারা আমাদেরও সাহায্য ও সমর্থন দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে তারা আমাদের সঙ্গে একমত। নিরাপত্তা পরিষদে চীনের বিরোধিতার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন বললেই যে মিয়ানমার শুনবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফিলিস্তিন সংকটের উদাহরণ দিয়ে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গৃহীত হলেও অনেক ক্ষেত্রে অনেক সময় তা কার্যকর হয় না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মোট আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এগুলো হলো ঢাকা বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানি এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে কাঠামো চুক্তি, ডিপিডিসি এলাকা প্রকল্পে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে সরকারি পর্যায়ে কনসেশনাল ঋণ চুক্তি, ডিপিডিসি এলাকা প্রকল্পে বিদ্যুত্ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার’স ঋণ চুক্তি, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে কাঠামো চুক্তি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারগরি সহায়তা চুক্তি, বিনিয়োগ সহযোগিতা ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে এমওইউ, ব্রহ্মপুত্র/ ইয়ালু ঝাংবো নদের পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন বিষয়ে এমওইউ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচির বিষয়ে এমওইউ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলো হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই)’ যোগ দিয়েছে। চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ার শঙ্কা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে সজাগ আছে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো ঋণ বাংলাদেশ নিচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও চীন যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেবেন। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৬ জুলাই ঢাকায় ফিরবেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।