পাঁচ বছরে চামড়া রপ্তানি কমেছে ৬০ শতাংশের বেশি

0
1

সমাজের কণ্ঠ  ডেস্ক  – ১৬ আগস্ট, ২০১৯: বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি কমলেও বাড়ছে ফুটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ। গত পাঁচ বছরের প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ দেশের চামড়াশিল্পে। এ ছাড়া বাংলাদেশের চামড়াশিল্প পরিবেশবান্ধব নয়—এমন অভিযোগে বিশ্বের খ্যাতনামা কম্পানিগুলো এ দেশ থেকে চামড়া নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে মন্ত্রীর দেওয়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির ঘোষণাকে ‘আত্মঘাতী’ বলে মন্তব্য করেছে ট্যানারি মালিকরা। কারণ ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ কাঁচা চামড়া কেনে না। তাই বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে হলে একমাত্র ভারতেই রপ্তানি করতে হবে। তখন ভারত তাদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করবে। এতে কাঁচা চামড়া রপ্তানি আবারও বাধার মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত।

রপ্তানিকারকরা জানায়, রপ্তানিযোগ্য চামড়ার একটি বড় অংশ সংগৃহীত হয় কোরবানি ঈদের (ঈদুল আজহা) সময়। এ সময় দেশে বিপুল পরিমাণ গবাদি পশু জবাই করা হয়। এসব পশুর চমড়া সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণের পর রপ্তানিযোগ্য করা হয়। ইতালি বাংলাদেশি চামড়ার প্রধান ক্রেতা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন এবং তৃতীয় স্থানে কোরিয়া।

চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৬৪ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চামড়া, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববাজারে কয়েক মাস ধরে চামড়ার দাম নিম্নমুখী। মূলত এ কারণে চামড়া রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদেই সংগ্রহ করা হয়। এ বছর ব্যাংকগুলো ট্যানারি মালিকদের সহযোগিতা করেনি। তাই কাঁচা চামড়ার বাজার মন্দা গেছে। এতে ট্যানারি মালিকদের কোনো হাত নেই।

তিনি আরো বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা হঠাৎ করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই দেশের চামড়াশিল্প বাঁচাতে হলে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি হয় ৩৯৭ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১৬৪ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলারের চামড়া।

রপ্তানিকারকরা বলে, ‘তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য চামড়ার দাম নিম্নমুখী। ভারতে এখন কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩০ টাকা। রপ্তানি করলে এর চেয়ে কম দামে আমাদের বিক্রি করতে হবে। এটা সম্ভব নয়। এখন বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াকরণ করা চামড়া রপ্তানি হয় ইতালি, জাপান, কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, হংকংসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে।’

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এম আবু তাহের বলেন, বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে কাঁচা চামড়া রপ্তানি হয়েছিল। বাস্তবতা এখন ভিন্ন। এখন কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে দেশি শিল্প মারা যাবে। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ব্যাপারে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্পনগরী কমপ্লায়েন্স না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের আকর্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া কেমিক্যালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পাওয়ায় চামড়ার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদনমূল্য বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না এবং এখনো আগের বছরগুলোর আনুমানিক ৫০ শতাংশ অবিক্রীত চামড়া মজুদ রয়েছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here