ডা. শাহরিয়ার আহমেদঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভরাডুবির কারনে বিমর্ষ বাংলাদেশী সমর্থকরা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনে অপসারনের দাবীতে অনলাইনে সারাদেশে চলছে পাপন বিরোধী বিক্ষোভ। তাছাড়াও সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এইতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগেও এদেশের ক্রিকেটে ছিলো সুখের বাতাস। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই দেশের ক্রিকেটে নেমে এসেছে ঘোর আমানিশা।
কথার লড়াই, সমালোচনা, ট্রল, মুশফিকের আয়নাকাণ্ড, রিয়াদের পেইন কিলার, লিটনের একের পর এক হতাশার গল্প, রানের উপর ডিসকাউন্ট, বিসিবি সভাপতির পাল্টা জবাব, ক্রিকেটারদের সমালোচনা সহ্য করতে না পারার মানসিকতা, মাশরাফির ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে কোচদের সমালোচনা করে ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট, সাকিবপত্নীর তামিম-মাশরাফির দিকে ইঙ্গিত করা পোস্ট, মাশরাফির ভাইয়ের পাল্টা জবাব, সাকিবের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়াসহ নানান ইস্যুতে গরম বাংলার ক্রিকেট পাড়া। জয়ের খুব কাছে গিয়েও শ্রীলংকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যাওয়ার বেদনা যেন ছাইচাপা আগুনে ঘি ঢালার কাজটি করেছে।
দেশের ক্রিকেটের এমন কঠিন সময়ে সবকিছু যেন আরও বেশি এলোমেলো করে দিচ্ছে। একদিকে মাঠে ক্রিকেটারদের মনোবলে ছিড় ধরেছে, অন্যদিকে সমর্থকদের ধৈর্য্য ধরার মনোবলও ভেঙ্গে গেছে।
মাঠের খেলার চাইতে মাঠের বাইরের কাণ্ড নিয়েই সবাই মেতে আছে। এর মধ্যে ক্রিকেটারদের লাগামহীন কথা-বার্তা যেমন আছে, তেমনি সমালোচনাকারীদেরও আছে অযৌক্তিক সমালোচনা করার মানসিকতা।
লিটনের বাজে ফরমের কারণে তাকে নিয়েও ব্যবসা করতে ভুলে যায়নি কিছু নোংরা মানসিকতার লোক। বলা হয়েছে সে যত রান করবে তত পার্সেন্ট ছাড় থাকবে। এইযে নোংরামি এসব কী ক্রিকেটারদের স্বস্তি দেয়? এসব কী একটু বেশি হয়ে যায় না?
সবশেষ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেই ফেললেন, তারা সমর্থকদের সমর্থন পেয়েও কিছু করতে পারছে না। এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশও করেছেন তিনি; কিন্তু এর আগে মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ তিনজনেরই কথা বলার স্টাইল ছিলো ভিন্ন রকমের।
মুশফিকের কথা তো রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা আলোচনার ঝড় তৈরি করেছে। পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি তর্ক হলেও আমি বলবো, মুশফিকের এমন কথা না বলাটাই উচিৎ ছিলো। সমালোচনা যদি সইতেই না পারেন তাহলে এই পেশায় আসারই দরকারই বা কি ছিলো?
এছাড়াও শ্রীলংকার বিপক্ষে মাহমুদুল্লার বাজে ক্যাপ্টেন্সি যেমন ছিলো, ঠিক তেমনি পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ছিলো ক্যাচ মিসের পসরা। এসব দলকে হারতে বাধ্য করেছে একপ্রকার।
এসবের সাথে অবশ্যই প্রসঙ্গত চলে আসবে কোচদের কথা। মাশরাফির ফেসবুক পোস্টের প্রতিটি লাইন একদম যৌক্তিক। যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে বিদেশি কোচদের রাখা হচ্ছে অথচ আমরা তাদের নূন্যতম কোনো ভূমিকা দেখছি না। যারা মাশরাফির পোস্টটি পড়েছেন তারা আরও ভালোভাবে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ তিনটা ম্যাচ জিতবে বলে আশা করেছিলো যারা, তারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্ধভক্ত। এরমধ্যে সবগুলো ম্যাচেই হেরে সুপার টুয়েলভের শেষ দল হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো টাইগাররা। শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারাতে পারবে এমন বিশ্বাস বাংলাদেশের সকল ভক্তেরই ছিলো।
এটা একদম পানির মতো পরিষ্কার; কিন্তু ভাগ্য কখনও কখনও সহায় হয় না। আর দুটো ম্যাচই যে বাংলাদেশ জিততে পারতো, এটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে এমন কেউ ছিল না। কারণ ম্যচ দুটোই বাংলাদেশের পক্ষে ছিলো। ম্যাচ দুটো হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি সেমির আশাও শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে কম রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবতে হলো টাইগারদের।
তবুও আমাদের ক্রিকেটে ঘোর অমানিশা কেটে যাবে, এই আশা করি। মুছে যাবে সকল ব্যাথা, বেদনা, দুঃখ। কারণ দিন শেষে আমরাতো আমরাই। খারাপ করলে যাকে নিয়ে সমালোচনা করি, ভালো করলে সেই থাকে নিয়েই লাফালাফি করি। ভুলে যাই অতীতের সকল ভুল।