চিকিৎসক নিয়োগে টালবাহানা।বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত সাড়ে ৮ হাজার চিকিৎসক

0
0
ডাঃ বাহারুল আলমের ফাইল ছবি

ডাঃ বাহারুল আলম – ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে আট হাজার চিকিৎসককে নন-ক্যাডার খেতাব দিয়ে নিয়োগ বঞ্চিত করে রেখেছে আমলাতন্ত্রের গোলকধাঁধা। অংশগ্রহণকারী যে সকল নবীন চিকিৎসকদের বয়স সীমা শেষ, তারা আর কোন দিন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ পাবে না, জন্মেই এরা মৃত্যুকে করেছে আলিঙ্গন। এ নিষ্ঠুরতার দায় কার?

সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে ও জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নূতন পদ সৃষ্টি করা হয় না। অপরদিকে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হয় না। ৩৯তম বিসিএসে প্রায় সাড়ে আট হাজার চিকিৎসক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও নন-ক্যাডার ঘোষণা দিয়ে রাখা হয়েছে, নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এ নন-ক্যাডার চিকিৎসকরা স্পষ্ট নয়, কবে কখন তারা ক্যাডারভুক্ত হবে এবং নিয়োগ পাবে। তারা যদি ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদেরকে ব্যর্থই বলবে, নন-ক্যাডার কেন বলবে?

অথচ কর্ম কমিশন ফলাফল ঘোষণায় উল্লেখ করেছে, নন-ক্যাডারভুক্ত সকল চিকিৎসক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পদ শূন্য না থাকায় তাদের নিয়োগ না দিয়ে নন-ক্যাডার আওতাভুক্ত করে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত সকলেই জানে চিকিৎসকদের ব্যাপক পদ শূন্য আছে। পরস্পর বিরোধী এ অবস্থানে থেকে নবীন চিকিৎসকদের নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কারণ কি?

ফলাফল ঘোষণায় কর্ম কমিশন থেকে আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে শূন্য পদের তালিকা তাদের কাছে আসলে ঘোষিত নন-ক্যাডার চিকিৎসকদের মধ্য হতে ক্যাডার ভুক্ত করে নিয়োগ দেওয়া হবে।

৩৯তম বিসিএসে নন-ক্যাডার নামধারী উত্তীর্ণ সাড়ে আট হাজার চিকিৎসক তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা ও হতাশায় নিমজ্জিত। মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সকলেই চুপ। কর্ম কমিশনের কাছে শূন্য পদের তালিকা কে পাঠাবে? জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় -এ বিষয়টি স্পষ্ট নয়। অথচ জেলা, উপজেলা হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে রোগীর ভোগান্তি চরমে। অন্যান্য অনেক কিছুর অভাবের সাথে চিকিৎসক ঘাটতি ভয়াবহ এক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

চিকিৎসকদের পেশাগত সেবা দেওয়ার সুযোগ করে না দেওয়ায় রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই। কর্ম কমিশন ও দুই মন্ত্রণালয় (জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য) চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রেখেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- কেবলমাত্র তাঁর সদিচ্ছা হলেই এই দুই মন্ত্রণালয় তৎপর হয়ে উঠবে এবং কর্ম কমিশন দশ হাজারেরও অধিক চিকিৎসক নিয়োগ দেবে। অতীতে কেবল প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণেই কর্ম কমিশন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে।

চিকিৎসক নিয়োগে টালবাহানা নিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশী চিকিৎসক, বিএমএ, ক্ষমতাসীন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল কেউ কিছু বলছে না। দুই মন্ত্রণালয়ের আমলাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘুরপাক খেতে খেতে জট পাকিয়ে আছে, ছাড়ানোর কেউ নাই। তরুণ চিকিৎসকরাই পারে এ স্থবিরতায় কঠিন আঘাত হানতে, তাহলেই জট ছাড়াবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here