চৌগাছার জগন্নাথপুর কাল পাক হানাদার মুক্ত দিবস

0
0

চৌগাছা প্রতিনিধি :কাল ২২ নভেম্বর যশোরের চৌগাছার জগন্নাথপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর সাথে পাক সেনাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। সশস্ত্র যুদ্ধের একপর্যায় উভয়ের গোলাবারুদ শেষ হলে যুদ্ধটি মল্লযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।

ইতিহাসের কারনে জগন্নাথপুর ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত। পরবর্তীতে গ্রামের নাম রাখা হয় মুক্তিনগর। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন বলেন, জগন্নাথপুর যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাকসেনারা সিংহঝুলী, মশিউরনগর মাঠ ও জগন্নাথপুরে সাজোয়া ট্রাংকসহ সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করতে থাকে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয় জগন্নাথপুর ও গরীবপুর মাঠ সংলগ্ন চাড়ালের বাঁশ বাগানে ও

তেঁতুল তলা এলাকায়।তিনি বলেন, মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে কোনঠাসা হয়ে পড়লে পাকসেনারা আকাশযুদ্ধ শুরু করে। পাক জঙ্গি বিমান জগন্নাথপুর মাঠসহ চৌগাছার আকাশ প্রকম্পিত করে তোলে। মুর্হুমুহু গুলিতে বিধস্থ করার চেষ্টা করা হলেও ভারতীয় বিমানের কাছে পরাস্থ হয় পাক বিমান। বারবার বাঁধার মুখে পাক বিমান চৌগাছার আকাশে বেশিক্ষন উড্ডয়ন করতে পারেনি। মিত্র বাহিনী দুটি বিমানকে ভূপাতিত করে দুজন পাইলটকে আটক করে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন উভয়ের গোলাবারুদ শেষ হলে এক পর্যায়ে জগন্নাথপুর আম্রকাননে শুরু হয় মলযুদ্ধ। অনেকে হাতাহাতি বা বেউনেট যুদ্ধও বলে। তিনি বলেন উভয় পক্ষ অস্ত্রের বাট, বেয়নেট, কিল, ঘুষি, লাথি এমনকি কুস্তাকুস্তির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গ্রামবাসি দা, শাবল, কাস্তে, লাঠি নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। ২২ নভেম্বর কামান যুদ্ধ শুরু হলে বহু পাকসেনা নিহত

হয়। এ দিন মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্দিক আক্রমন ও রণকৌশলে পাক সেনারা দিশেহারা হয়ে বিদ্ধস্ত ৮ টি ট্যাংক, বাকসো ভরা মার্কিন চাইনিজ অস্ত্রশস্ত্র ফেলে রেখে যশোর সেনানিবাস অভিমুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্ত হয় জগন্নাথপুর গ্রাম। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫৭ জন সাধারণ জনগন মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন নিহতের নাম পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন সুজাউদ্দৌলা, আসাদুজ্জামান মধু, আব্দুর রাজ্জাক, আবুল হোসেন, রেজাউল হোসেন, করিমন নেছা, মহিউদ্দীন, রহিমা খাতুন, ভানু বিবি, ছইরন নেছা, দেওয়ান মুন্সি, কফিল উদ্দীন, বিশু মন্ডল, খোকা বারিক, আলতাপ হোসেন, জহির উদ্দীন, হাসান আলী, আয়শা আক্তার ও তাহের আলী। মল্লযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর জগন্নাথপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন মুক্তিনগর। পরবর্তীতে তিনি মল্লযুদ্ধের স্থানে মুক্তিনগর শহীদ স্মরণি শিক্ষা নিকেতন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। জগন্নাথপুর গ্রামের আম্রকাননে ১৯৯৭ সালের আগষ্ট মাসে ভারতীয় সেনা প্রধান শংকর রায় চৌধুরী পরিদর্শনে আসেন। এ এলাকায় তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধেরনেতৃত্বে দেন। বিখ্যাত সেই আ¤্রকানন এখন আর সেখানে নেই। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ডাঃ নূর হোসেন বলেন, জগন্নাথপুর-গরীবপুর সংলগ্ন এলাকায় যুদ্ধটি স্মরণযোগ্য। যুদ্ধে পাক সেনাদের ৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়। মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর গোলাবারুদ ও যুদ্ধের রসদ শেষ হলে উভয় মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here