সমাজের কন্ঠ ডেস্ক – মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের অনিয়ম ও দুর্নীতির নিউজ করায় একটি হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ’র মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি এম. এ. কাইয়ুমকে। উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে অপকর্ম আড়াল করতে কুলাউড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান, ইউএনও আবুল লাইছ ও এসিল্যান্ড জাদিদ ষড়যন্ত্র করে সাংবাদিকের নাম যুক্ত করিয়েছেন।
মামলায় ঘটনার যে তারিখ দেওয়া হয়েছে সেই দিন এম এ কাইয়ুম ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার আবু জাফর রাজুর সফর সঙ্গী হয়ে সিলেট শহরে। মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা ও মৌলভীবাজার জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম ও লুটপাট এবং কুলাউড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ’র প্রতিনিধি এম. এ. কাইয়ুম। এসব নিউজ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম তদন্ত করতে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয় আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজের গুণগত মানের প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠাতে। ইউএনও এবং এসল্যিান্ড তাদের দুর্নীতি আড়াল করতেই কুলাউড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান সলমানের নেতৃত্বে একটি হত্যা মামলায় এম এ কাইয়ুমকে যুক্ত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুলাউড়ায় চলমান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ কাজে করা হয়েছে সীমাহীন অনিয়ম। যার নেতৃত্বে আছেন কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল লাইছ। প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর কাজে এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ২০ টুকরি বালু মিশিয়ে কাজ করেছে মিস্ত্রি। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো অপদস্থ হতে হয়েছে উপকারভোগীকে। এতে ফেটে গেছে খুঁটি, ঘর ও বারান্দার ফ্লোর। ফলে ঘরের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। ল্যাট্রিন নির্মাণে ৮টি করে রিং স্লাব ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৫-৬টি করে রিংস্লাব।
প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়োগ দেয়া হয় ইউএনওর পছন্দের ঠিকাদার। নিয়োগকৃত রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিরা ইচ্ছে মতো কাজ করছেন। উপকারভোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। এমনকি দরজা-জানালা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়াই, শিশু, আকাশমণি গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও অল্প বয়সী ও অসার ইউক্যালিপটাস কাঠ দিয়ে তড়িঘড়ি কাজ করছেন।
অন্যদিকে কুলাউড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশ হয়। উপজেলার রবিরবাজার থেকে প্রায় ৪৫টি দোকান বন্দোবস্ত দেয়ার নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: সাদিউর রহিম জাদিদ। উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে লিজ নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে কৌশলে এই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে লিজগ্রহীতরা জানান।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারে প্রায় ৪৫টি দোকান একসনা লাইসেন্স ভিত্তিক বন্দোবস্ত প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তিনামা সম্পাদন করা হয়। এক বছরের লিজ ফি বাবত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দোকানকোটা প্রতি মাত্র একশ থেকে দেড়শ টাকা জমা করা হয়। অথচ প্রতিটি দোকান মালিকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়।
মামলায় যেভাবে নাম যুক্ত করা হল:
কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে চুরির দায়ে ৫ সদস্যের বিচারকি প্যানেল অভিযুক্ত আসামি ইছরাইল আলী নামের এক যুবককে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। গ্রাম আদালতের রায়ের পর আদালতের বারান্দায় ইছরাইল আলী তার বাবা আছদ আলী সাক্ষী দিয়ে তাকে চোর সাব্যস্ত করেছেন বলে বাবাকে দোষারোপ করে।
এরপর বাড়ি ফিরে বাবা ও ছেলে পরস্পরকে অভিযুক্ত করেন। ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় এক পর্যায়ে বাবা আছদ আলীর বিরুদ্ধে অভিমান করে ছেলে ইছরাইল আলী কীটনাশক পান করেন। প্রথমে কুলাউড়া হাসপাতালে ও পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করলে পরদিন ৬ মে সকাল ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ইছরাইল আলী।
ইছরাইল আলীর মৃত্যুর পর একটি প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে ৭ মে রাতে আছদ আলী কুলাউড়া থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান ছালাম, গ্রাম আদালতের মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা চৌধুরী পাবেল ও বাদী পক্ষের মনোনীন গণ্যমান্য ব্যক্তি নজরুল ইসলাম সহ অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনের নামে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রথমধাপে ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমানের নেতৃত্বে সাংবাদিক এম এ কাইয়ুমের নাম যুক্ত করা হয়। যদিও সেই ঘটনা কিংবা বিচারকি কার্যালয়ে এম এ কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান (শফি আহমদ সলমান) নাম দিলে আমার কি করার আছে।
পূর্বপশ্চিমের প্রতিনিধি এম এ কাইয়ুম জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম এবং একসা বন্দোবস্তের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের নিউজ করায় ষড়যন্ত্র করে আমায় মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার নাম সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে সেই নিউজ করা কি আমার অপরাধ?