কলারোয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও নিজ ক্লিনিকে রোগী বানিজ্যের অভিযোগ

0
0

আল আমিন জনি, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একেবারে নাকের ডগায় গড়ে উঠেছে গ্রাম থেকে আগত সরলমনা রোগীদের নিয়ে রমরমা বানিজ্য কেন্দ্র ‘কলারোয়া আরোগ্য সদন প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার’ নামের একটি রোগী ঠকানোর প্রাইভেট ক্লিনিক। এই ক্লিনিকে চলছে রোগী বানিজ্যের এক মহোউৎসব। যেনো দেখার কেউ নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাগন রহস্যজনকভাবে রয়েছে নিরব। ক্লিনিকটি নিয়ে উঠছে নানান অভিযোগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভুমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এবং স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, এই ক্লিনিকটির মালিক কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান সান্টু। যদিও তিনি সরকারী চাকুরীরত নন বিসিএস ডাক্তার হওয়ায় ক্লিনিকটি তার নিজের নামে করতে পারেনি, কিন্তু এটি নামে মাত্র তার নিজের পরিবারের সদস্যের নামে চালু করে নিজেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন ক্লিনিকে সকল ধরনের রোগী দেখা ও বিভিন্ন অপারেশন করায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত একজন বিসিএস মেডিকেল অফিসার বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার। সেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার উপস্থিত থাকলেও নিজের অসৎ উদ্দেশ্য সফল করতে সেই আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে পাশ কাটিয়ে ডাঃ মাহবুবুর রহমান সান্টু নিজেই রাউন্ড শেষ করেই হাসপাতালে ভর্তিকৃত বিভিন্ন দরিদ্র ও সরলমনা রোগীদের অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে তার নিজস্ব ক্লিনিকে যেতে পরামর্শ দেন। কলারোয়া সরকারী হাসপাতালের ল্যাবরেটরীতে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও তিনি তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক কলারোয়া আরোগ্য সদনে পাঠিয়ে দেন। তিনি তার ক্লিনিকের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অহেতুক এসকল পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেন বলে হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান। এমনই একটি ঘটনা ঘটে গত ৩রা আগষ্ট হাসপাতালে ভর্তি এক দরিদ্র রোগী কলারোয়ার ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত জমাত আলীর স্ত্রী সাবিনা খাতুনের কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় টেষ্ট লিখে দিয়ে পরীক্ষার জন্য তার ডায়াগনষ্টিক সেণ্টারে যেতে বলা হয়। এভাবে অগনিত রোগীকে প্রতিনিয়ত অহেতুক বিভিন্ন পরীক্ষা লিখে তার মালিকানাধীন ক্লিনিকে যেতে প্ররোচনা করেন তিনি।

তাছাড়াও তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল পরিচালনায় আরো নানান অভিযোগ রয়েছে, তার বিতর্কিত ও একক সেচ্ছাচারিতার কারনে হাসপাতালের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মাঝে রয়েছে প্রচন্ড চাপা ক্ষোভ। বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার বিভিন্ন সেচ্ছাচারিতায় এক প্রকার অতিষ্ট ও জিম্মি হয়ে আছেন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের দুজন মেডিকেল অফিসার সমাজের কন্ঠকে বলেন, তিনি আমাদের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ায় তার সেচ্ছাচারিতায় বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী বিরক্ত হলেও মুখ বুজে মেনে নিতে হচ্ছে তার সকল সেচ্ছাচারিতা। তারা আক্ষেপ করে আরও বলেন আমরা অবর্ননীয় কষ্ট করে পড়ালেখা করে বিসিএস পাশ করে এসে একজন নন বিসিএস ডাক্তারকে ইনচার্জ হিসাবে মেনে নেওয়াটাও আমাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক। তারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, কিছুই করার নাই ভাই।

এদিকে হাসপাতালে কর্মরত ৩ জন কর্মচারীর সাথে কথা বললে তারা পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সান্টু স্যার সকালে অফিসে এসে হাজিরা দিয়েই বেশিরভাগ সময় ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কখনও পকেটে হাত দিয়ে কাজ বাদ দিয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে অযথা ঘুরে বেড়ান আবার যখন তখন নিজের ইচ্ছামতো বের হয়ে নিজের ক্লিনিকে যেয়ে রোগী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বলেও জানান। তাছাড়া সরকারী বিধি লংঘন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই নিজের খেয়াল খুশি মতো হাসপাতালের বিভিন্ন অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কাজ করে সমালোচিতও হচ্ছেন তিনি বলে সুত্রে জানা যায়।

সরেজমিনে যেয়ে আরও জানা যায়, হাসপাতালে আগত অনেক গরীব ও অসহায় রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফুসলিয়ে তার ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কলারোয়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা, ডাক্তার, নার্স সবই রয়েছে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ প্রাইভেট ক্লিনিকের সংগে সম্পৃক্ত ডাক্তারদের অপতৎপরতায় ৯০ শতাংশ গর্ভবতী মায়েরা প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করান বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়।

সরেজমিনে ঘুরে আরও দেখা যায় হাসপাতালে কোন অপারেশানের রোগী না থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে অনেক গরীব রোগী ভর্তি আছে।

তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে,  করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবী ও আপ্যায়ন বাবদ ৯ লাখ টাকা সরকারী বরাদ্ধ আসে। এসময় স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ৬ জন আনসার সদস্য রুটিন মাফিক ডিউটি করলেও কাগজ কলমে ৯ জনের ডিউটি দেখানো হয়েছে। প্রত্যেক আনসারের জন্য ৫৮ হাজার ২’শ টাকা উত্তোলন দেখানো হলেও তাদের হাতে মাত্র ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে আনসার সদস্য মুরারীকাটি গ্রামের মৃত আ: রহমানের ছেলে মোহাম্মাদ আলী অভিযোগ করেন।

তাছাড়া, প্রতি বছরে হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত ২ মাস যাবৎ হাসপাতালে কোন পরিচ্ছন্নতার কাজই করা হয়নি বলে জানা যায়।

ডা. সান্টু হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে  বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে তার দাম্ভিক ও অসৌজন্যমুলক আচরনের কারনে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বেশিরভাগ কর্মীরা স্বাস্থ্য বিভাগের বেশিরভাগ কর্মকান্ড থেকে বিরত আছে বলে জানা যায়, এই অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ কর্মকান্ড।

এলাকার সুশীল সমাজের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, এইভাবে চলতে থাকলে কলারোয়া সরকারী হাসপাতালটির সকল কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়বে, ফলে দেখা দেবে বিপর্যয়। বিষয়গুলি অতিদ্রুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেখা উচিৎ বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

বিষয়গুলি নিয়ে এই প্রতিবেদক খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মনজুরুল মুর্শিদ সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, আগেও তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এখন নতুন করে ওঠা এই অভিযোগগুলির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সূত্রঃ  কলারোয়া নিউজ ও সরেজমিন প্রতিবেদন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here