কয়রায় আশ্রয়ন গৃহ পেয়ে ১২০ পরিবার আনন্দে উচ্ছ্বসিত

0
0

মোঃ ইসহাক আলী, কয়রা উপজেলা (প্রতিনিধি) মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে খুলনার কয়রা উপজেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে ভূমিহীন-গৃহহীন, আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত জমি আছে ঘর নেই এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সহ ১২০টি পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নতুন স্বপ্নের ঠিকানা দু’কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা গৃহ।

এতে উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন ও হতদারিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। তারা পাচ্ছে মাথা গোজার ঠাঁই। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে অধীর আগ্রহে উপকার ভোগীরা সময়ের অপেক্ষা করছেন কখন তাদের স্বপ্নের গৃহ উঠবে।

এসকল গৃহের মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণি ৩০টি, আম্ফানের ক্ষতিগ্রস্ত জমি আছে ঘর নেই পরিবা ৭০টি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ২০টি গৃহ নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। গৃহহীন পরিবারগুলো তাদের স্বপ্নের ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে।

গত ২৫ এপ্রিল (রবিবার) খুলনা জেলা দক্ষিণাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, খুলনা জনাব সাদিকুর রহমান খাঁন, কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস সরেজমিনে গিয়ে কাজের সার্বিক বিষয় খোঁজখবর নেন। “আশ্রয়ণের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার”এই স্লোগান বাস্তবায়নে কয়রা উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার খাস জমিতে গৃহ নির্মাণের কাজ করছে কয়রা উপজেলা প্রশাসন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সুবিধাভোগী পরিবারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে গৃহ নির্মাণের কাজ করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)।

আগামী ২০ মে এর মধ্যে কাজ শেষ করে উপকার ভোগীদের মধ্যে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে বলেও পিআইসি’র পক্ষ থেকে জানা গেছে। প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত করে ওই জমির ওপর ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি সেমি পাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। সরকারি নির্ধারিত নকশায় সবগুলো ঘর তৈরি করা হচ্ছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট ও গোসলখানা সহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে মুজিব শতবর্ষের ঘরগুলোতে। এদিকে ” ক” শ্রেণির গৃহ প্রতি পরবর্তীতে আরো ১৯ হাজার টাকা আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ বরাদ্দ থাকবে বলেও পিআইসি নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্য়ায়ে ৩ ক্যাটাগরিতে ১২০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। ভুমিহীন ও গৃহহীন ৩০ টির মধ্যে ১৮ টি মহারাজপুর ইউনিয়নে, ১০টি কয়রা সদর ইউনিয়নে, ১টি উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন এবং অন্য ১টি দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। আম্ফান ক্ষ ৭০টির ৩৫ টি কয়রা সদর ইউনিয়ন ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন এবং বাকি ৩৫ টি ৫ ইউনিয়ন,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২০ টির ১৩ টি কয়রা সদর ইউনিয়ন এবং ৭ টি উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান আছে।

সরেজমিনে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পিআইসি’র নিযুক্ত শ্রমিক কোথাও ঘরের ভিটের কাজ করছে, কোথায় ঘরের গাথুনি, কোথাও ঘরের চাল ছাওয়ার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। পিআইসি সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জনাব সাগর হুসাইন সৈকত এসকল গৃহ নির্মাণে সার্বক্ষণিক শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ ও তদারকি করছে। কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থাও গ্রহণ করছেন পিআইও। ঘর নির্মাণে কোথাও কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্মাণধীন ঘর পেয়ে অসহায় মানুষেরা অনেক খুশি। নতুন ঘরে উঠতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে এসব অসহায় হতদারিদ্র মানুষগুলো।

ঘর পাওয়া কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নে ২ নং কয়রা গ্রামের সূর্য সেন বলেন, “কপোতাক্ষের নদী ভাঙ্গনের লোক আমরা। ভাঙ্গনে ভিটা-মাটি সহ আমার সবকিছুই নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে আমাদের থাকার ঘরবাড়ি নেই। বর্তমান সরকার আমাদের ঘর দেয়ায় আমরা খুবই খুশি। প্রধানমন্ত্রী ও এমপি বাবু’র দীর্ঘজীবি কামনা করি।”

একই গ্রামের ৮০বছরের বৃদ্ধা প্রশাদ কুমার মন্ডল জানান, “নদী গর্ভে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর আমরা খুপরিতে বাস করি। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা ঝড় বৃষ্টি খেয়ে বেঁচে আছি। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। এজন্য আমরা সবাই অনেক খুশি। শেখ সাহেবের বেটি শেখ হাসিনার অনেক দিন বেঁচে থাকুক। শেখের বেটি যাতে আমাদের জন্য আরো করে দিতে পারে এজন্য আমরা আল্লাহর নিকট দোয়া করি।”

মহারাজপুর ইউনিয়নের উপকারভোগী ভিক্ষুক ছকিনা বেগম বলেন, “আমার জায়গা জমি ছিলো না। এর বাড়ি ওর চেই চিন্তে, কাজ কর্ম করে ঝুঁপড়িতে কষ্টে থাকতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমাদের মা জননী হাসিনা জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে। আমি তাতে অনেক খুশি। তার জন্য নামাজ পড়ে মোনাজাতে দোয়া করবো। আমাদের মতো গরিবদের পাশে যেন সে সারা জীবন থাকতে পারে। আমাদের চোখের পানিটা যেন মুছে যায়। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীর কাছে সম্মান পায়।”

প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ আক্তারুজ্জামান বাবুকে ধন্যবাদ দিয়ে একই গ্রামের উপকারভোগী বিধবা খাদিজা খাতুন বলেন, “ঘর পেয়ে খুবই খুশি হলাম। আমার ঘর বাড়ি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী দেয়ার কারণে আমার এখন সবকিছুই হল।”

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, “মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া কর্মসুচী হাতে নিয়েছেন। সে হিসেবে কয়রা উপজেলায় সরকারিভাবে দ্বিতীয় ধাপে ১২০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। ঘরগুলো যাতে টেকসই এবং মানসম্মত হয় সেজন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। এসব ঘরগুলোর মান অনেক ভালো। গৃহহীন ব্যক্তিরাই এসব ঘর পাচ্ছেন।”

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় “যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কয়রার জন্যে পরবর্তীতে আরো ঘর বরাদ্দের জন্য তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ীই পর্যায়ক্রমে সকলেই ঘর করে দেওয়া হবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here