জুলফিকার আলী,কলারোয়া(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও বিলি কেটে ধানের ক্ষেতের ধান গাছ একটু ফাকা করে দিয়ে এর প্রতিকার পেয়েছে কৃষকেরা। হঠাৎ আমন ধানের ক্ষেতে পোকার আক্রমনে এখানকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয় পোকা দমনে বাজারে আশানুরুপ ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলো কৃষকরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ পোকা দমনে ধান ক্ষেত পরিদর্শন, প্রচারপত্র বিলি এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কলারোয়া কৃষি অফিসের দায়িত্ব নিয়োজিত ঐ বøকের উপ সহকারী কৃষি অফিসার সার্বক্ষনিক ভাবে দেখভাল করছেন। কৃষকদের আশংকা ছিল সময় মতো পোকা দমন করতে না পারলে আমন উৎপাদন মারাত্বক ব্যহত হতে পারে। সব কিছু মিলে, আমন ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমনে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এলাকার হাজার হাজার কৃষক। গত ২০ নভেম্বর থেকে হঠাৎ করে ধানের ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং এর আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অত্র এলাকার কৃষকরা দিশে হারা হয়ে পড়ে। রোববার সকালে উপজেলার পাটুলী, উলুডাঙ্গা, খোরদো, দেয়াড়া, মেহমানপুর, কুশোডাঙ্গা, রায়টা, পাকুড়িয়া, কলাটুপি, চিতলা, শাকদাহ, শিবান্দকাটি, ছলিমপুরসহ- অন্যান্য এলাকা ঘুরে দেখা গেছে-মাঠে আবার সবুজের সমারোহ, সেখানে মাঠের পর মাঠ ফসল বিবর্ণ হয়ে পাতা বিবর্ন হয়ে গিয়েছিল। এসব ধান ক্ষেতে কৃষকরা বিষ প্রয়োগ করেও ধানের ক্ষেত বাঁচাতে হিমসিম খেয়েছেন। এ পোকার আক্রমন এতটাই ভয়াবহ যে, পোকা এক মাঠ থেকে অপর মাঠে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় কৃষকরা এ পোকার নাম দিয়েছে কারেন্ট পোকা। এতে করে আক্রান্ত ধানের ক্ষেত মুহুুর্তের মধ্যে বাদামি রং ধারণ করে। ধান ক্ষেতে পোকা দমনের জন্য অনেক কৃষক কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি ঝাড়-ফুক ও তাবিজ-কবজের আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফসল হানির আশংকায় কৃষকরা শঙ্কিত ছিলেন। এখন কৃষকেরা মোটামুটি ভাবে আশংকামুক্ত। এই এলাকার কৃষকেরা জানান, গত কয়েক দিন পূর্বে এলাকার ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছিল, ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমনের পর বর্তমানের পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মফে, ২ নং ছলিমপুর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ, ইউপি সদস্য প্রধানমন্ত্রী কৃষি পদক প্রাপ্ত আকলিমা খাতুন জানান, বাদামী গাছ ফড়িং (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকা আমন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ধান গাছে কাইচ থোড় আসার পর পোকার আক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল । পোকার ডিম থেকে বেরিয়ে আসা বাদামী গাছ ফড়িংয়ের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়ষ্ক উভয় পোকা দলবদ্ধ ভাবে ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খেয়ে ফেলছিল। আর এ কারণে গাছ দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কলারোয়া উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুব উন্নয়নের কয়েকজন কর্মি এবং স্থানীয় বøকের দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি অফিসার একেএম মামুনুর রশিদ এ বিষয়ে নিয়মিত করনীয় বিষয়ে উপদেশ, লিফলেট বিলি এবং ক্ষেতে সরেজমিনে তদারকী করছেন। উপজলো কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহাসিন আলি জানান-আমি বিপিএইচ লাগার আগেই কৃষকদের সতর্ক করেছি এবছরের আবহাওয়া বিপিএইচ লাগার অনুকুল। তাদেরকে বলেছি আক্রমন দেখা দেওয়ার সাথে ধান ক্ষেতের পানি বের করে দেওয়া, বিলি কেটে প্লেনাম/ একতারা/ মিপসিন নামক কীটনাশক গাছের গোড়া সহ সমস্ত গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে। তাছাড়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কতৃক সরবরাহকৃত লিফলেট কৃষকদের মাঝে বিতরণ, মসজিদে পড়ে শুনানো এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিপিএিইচ দমননের ব্যাপারে জোরালো ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। নিয়মিত মাঠপরিদর্শন ও পরামর্শ দেওয়ার ফলে ৯৫ শতাংশের বেশী জমি বিপিএইচের আক্রমন নিয়ন্ত্রনে এসেছে। যে জমির ধান পেকে গেছে সেগুলো দ্রæত কেটে ফেলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নে বালাইদমনের জন্য স্কোয়াড গঠনের মাধ্যমে বিপিএইচ দমন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কৃষি স¤প্রসারণ অফিসার মোঃ ইমরান হোসেন, এসএপিপিও মনিরুল হক কলারোয়া পৌরসভা সহ ১২ টি ইউনিয়নে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন পূর্বক পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন। স্থানীয় ভাবে এই পোকাকে কৃষকরা কারেন্ট পোকা বলছেন। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এরই মধ্যে এ সর্ম্পকিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনে তৎপর রয়েছে।