নাভারণে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মেধাবী স্কুলছাত্রী নিপার দরকার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা

0
0

নাজিমুদ্দীন জনি (শার্শা) চাচ্চু আমি কি একটি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবো না? সমাজের কাছে কি আমার বোঝা হয়ে থাকতে হবে।’ যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শনিবার এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলছিলেন শার্শার নাভারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মেধাবী স্কুলছাত্রী মিফতাহুল জান্নাত নিপা। মেয়ের এমন কথা শুনে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে শুরু করেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পিতা-মাতা। অথচ মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে তাদের হাসি ও আনন্দে মেতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু চাকরি ও বাড়ির কাজ ফেলে একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য গত ১৭ দিন থেকে তারাও হাসপাতালে রয়েছেন। গত ২০ মার্চ স্কুল যাওয়ার পথে পল্লী বিদ্যুতের একটি পিকআপ গাড়ির চাপায় গুরুতর আহত হয় নিপা। হাসপাতালে ভর্তি করলে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। মিফতাহুল জান্নাত নিপা শার্শার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও মাতা মুসলিমা বেগমের সন্তান। তাদের চার বছরের মুনতাকিম রাফি নামে আরেকটি পুত্রসন্তান আছে। নিপা বুরুজবাগান পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। সড়ক দুর্ঘটনার কিছুদিন পর প্রকাশিত পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায়। সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকা নিপার চিকিৎসায় অর্থের অভাব দেখা দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার ডান হাতের অপারেশন এবং এর এক সপ্তাহ পর চিকিৎসকরা নিপার বাম পায়ের গোড়ালি অপারেশন করার পরিকল্পনা করেছেন। এখানে গোড়ালি ঠিক করা সম্ভব না হলে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল বা ভারতে মেয়েকে নেয়া লাগতে পারে বলে নিপার পিতা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম পা লাগাতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বা তার থেকে বেশি লাগতে পারে। যা তার পিতার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব না। যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসার খরচসহ সকল সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবারটির হতাশা কাটছে না। নিপার মা মুসলিমা বেগম বলেন, মেয়ের বাবা একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারের তেমন কোনো সম্পদ নেই। তার পক্ষে মেয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য এত টাকা জোগাড় করা কঠিন। ঘটনার দিন যশোরের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আগামীতে চিকিৎসা খরচসহ সকল সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বাদেও যশোরের স্বার্থহীন সামাজিক সংগঠন (এসএস ফাউন্ডেশন) ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভর্তির পর থেকে ওষুধসহ বিভিন্ন খরচ বাবদ এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। হাসপাতালে মেয়ের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিপার বাবা বলেন, মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে? পরিবারের সকল সুখ, শান্তি কেড়ে নিয়েছে ঘাতক পিকআপ। অথচ প্রশাসন এখনও সে গাড়ির চালককে আটক করতে পারেনি। তিনি সরকারের কাছে মেয়ের উন্নত চিকিৎসা ও চালকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। হাসপাতালের অর্থো সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, নিপার ডান পা কাটার পরে ক্ষত শুকাতে শুরু করেছে। আগামী মঙ্গলবার তার ডান হাতের অপারেশন করা হবে। এর পরে নিপার শারীরিক অবস্থা দেখে পরের সপ্তাহে বা তারও কিছু পরে বাম পায়ের গোড়ালি অপারেশন করার চেষ্টা করবেন। গোড়ালির অবস্থা ভালো থাকলে অপারেশন করা সম্ভব হবে। তা না হলে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল অথবা ভারতে নিয়ে অপারেশন করাতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here