প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ‘উধাও’ দরিদ্র মহিলার ২৫ বসরের গচ্ছিত টাকা

0
2

আল আমিন জনি (ঢাকা থেকে): প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেলো হতদরিদ্র মহিলার ২৫ বসর ধরের তিল তিল করে গচ্ছিত করে রাখা টাকা। ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ।

ভুক্তভোগী দরিদ্র নাম টাঙ্গাইলের মাহমুদা নাসরিন। থাকতেন গাজীপুরে। সুখের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোটে। আর সেই স্বপ্ন জমা রেখেছিলেন ব্যাংকে। ২৫ বছরের জমানো সেই স্বপ্ন ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে গেছে। আকাশ নামে কেউ একজন চেক জাল করে তুলে নিয়ে গেছে মাহমুদার জমানো সব টাকা।

মাসখানেক আগে ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের আশুলিয়ার প্রাইম ব্যাংকের আশুলিয়ার গণকবাড়ি শাখায়। টাকার পরিমাণ দুই লাখ। তবে মাহমুদার কাছে এর অংক বিশাল। ১০ বছর পোশাক কারখানায় চাকরি জীবনের উদ্বৃত্ত, সবজি বিক্রি করে পাওয়া টাকা, আর শখ পূরণের জন্য স্বামীর দেয়া টাকা খরচ না করে রেখেছিলেন ব্যাংকটিতে। গত মাসে চেক বই খুঁজে না পেয়ে ব্যাংকে যান মাহমুদা। গিয়ে দেখেন তার অ্যাকাউন্ট থেকে দুই লাখ টাকা ‘আকাশ’ নামে এক ব্যক্তি স্বাক্ষর জাল করে তুলে নিয়ে গেছেন। তবে তাকে চেনেন না মাহমুদা, কোনো চেকও দেননি।

এই ঘটনায় মাহমুদা ২৮ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় চেক জালিয়াতির অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, ১১ অক্টোবর বাসায় চেক বই খুঁজে না পেয়ে দ্রুত ব্যাংকে যান তিনি। সেখানে গিয়েই জানতে পারেন তার জমানো দুই লাখ টাকা আকাশ নামে কেউ চেক জাল করে তুলে নিয়েছে।

মাহমুদা বলেন, গ্রাহক নিজে উপস্থিত না থাকলে ৩০ হাজার টাকা তুললেও ব্যাংক থেকে কল দেয়া হয়। আর দুই লাখ টাকা তুলতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হয়। কিন্তু প্রাইম ব্যাংক কিছুই করেনি। ব্যাংকের ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অফিসার আনোয়ার হোসেনের কাছে এর জবাব চাইলে তিনি উল্টো আমাকে অপমান করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইল থেকে স্বামী রেজাউল করিমের সঙ্গে ঢাকায় আসি। আমি ইপিজেডের গার্মেন্টসে চাকরি নেই। আর স্বামী ছোট্ট একটা কসমেটিকসের দোকান দেয়। তখন থেকেই অনেক কষ্ট করেছি। শ্রীপুরের খান কলোনি থেকে ৪০-৪৫ মিনিটের পথ হেটে গার্মেন্টসে এসেছি। গাড়ি ভাড়া, টিফিনের টাকা, অফিসের ইনক্রিমেন্ট, ওভারটাইমের টাকা খরচ না করে জমিয়েছি। স্বামী কিছু কিনতে দিলে সেটাও জমিয়ে রেখেছি।

মাহমুদা বলেন, প্রতি মাসে ২০০-৫০০ টাকা স্বামীকে না জানিয়ে পোস্ট অফিসে রেখেছি। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ওদের দেখাশোনা করার জন্য ১০ বছর পর চাকরি করার পর ছেড়ে দেই। ২০১২ সালে পোস্ট অফিসে জমানো ৫০ হাজার টাকা তুলে গ্রামে মায়ের কাছে পাঠাই। মা কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতো। ছাগল কিনে দিয়েছিলাম সেগুলা মা-ই পালতো। চাকরি ছাড়ার পর বাড়ির পাশে মানুষের জমিতে সবজি চাষ করতাম, দর্জির কাজ করতাম। সবজি বিক্রি করা টাকা মাসে মাসে নিজের কাছে রেখেছি। ৩-৪ বছর আগে একজনের পরামর্শে প্রাইম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। তখন থেকে বছরে ৮০ হাজার, ৫০ হাজার, ২০ হাজার, ১০ হাজার টাকা করে জমা রাখি। এভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা আমার একাউন্টে জমা হয়।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের অফিসার শাহিন ও আনোয়ারের কাছে জানতে চাইলাম- এতগুলো টাকা দিয়ে দিলেন অথচ আমাকে একবারও কল দিলেন না। ভোটার আইডি কার্ডও রাখেন নাই। এসব কথা শুনে তারা আমাকে যাচ্ছেতাই বলে। ব্যাংকে উপস্থিত সবার সামনে আমাকে পাগল প্রমাণ করতে চায়। যে চেক দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে সেটিও আমাকে দেখাতে পারেনি। পরে ম্যানেজারের কাছে গিয়ে ওই চেকের ছবি তুলে আনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বলিভদ্র শাখার প্রাইম ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ শাহতাব রিজভী ফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি সেনসিটিভ। তাই অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here