জহর হাসান সাগরঃ সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায় দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া পূর্নিমা দাসকে (১৬) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার একমাত্র আসামী ভিকটিমের প্রেমিক পার্থ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর ও লোকহর্ষক এ ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের পর থেকে আত্মগোপনে থানা পার্থ মন্ডলকে ধরতে একের পর এক টানা চিরুনি অভিযান শেষে শনিবার সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. সজিব খানের নেতৃত্বে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি ফরিদ আহমেদসহ সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস দল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথন্ডা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত পূর্নিমা দাসের বাবা টিকেট গ্রামের শান্তি দাস বাদী হয়ে তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোবাইলের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষন ও হত্যার ঘটনায় পূর্নিমার কথিত প্রেমিক একই এলাকার শিবপদ মন্ডলের ছেলে ডায়াগনষ্টিক কর্মচারী পার্থ মন্ডলকে একমাত্র আসামী করে দেবহাটা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-১১।এদিকে হত্যাকান্ডের পর থেকে পার্থ মন্ডলকে গ্রেপ্তারে দেবহাটা সহ সাতক্ষীরা শহরের সম্ভাব্য একাধিক স্থানে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে আসছিল দেবহাটা থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র একাধিক অভিযানিক দল।চাঞ্চল্যকর এ মামলার একমাত্র আসামী পার্থ মন্ডলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ আহমেদ বলেন, স্কুল ছাত্রী পূর্নিমা দাসকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার একমাত্র আসামী পূর্নিমার প্রেমিক পার্থ মন্ডলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সম্ভাব্য একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। সর্বশেষ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পলাতক পার্থ মন্ডলের অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে ভারতে পালানো প্রস্তুতিকালে সদরের কাথন্ডা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তার পরবর্তী পার্থ মন্ডলকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে; এসংক্রান্ত আরোও বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও জানান ফরিদ আহমেদ।
উল্লেখ্য, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাতভর নিখোঁজ ছিল উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তি দাসের মেয়ে গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী পূর্নিমা দাস। পরদিন শুক্রবার সকালে একই এলাকার তারক মন্ডলের জনমানবহীন পরিত্যক্ত বাড়ির সবজি বাগান থেকে পূর্নিমা দাসের বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ থেকে কিছুটা দূরে পড়ে থাকা ভিকটিমের বই-খাতা, জুতা ও গোপনে ব্যবহার করা পূর্নিমার একটি মোবাইল ফোনও আলামত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। যার ক্ষুদে বার্তায় দেখা যায়, নিখোঁজের আগ মুহুর্তে পূর্নিমাকে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির কাছাকাছি ডেকে এসএমএস করেছিল তার প্রেমিক পার্থ মন্ডল। পরিবারের সদস্যদের নজর এড়িয়ে পূর্নিমা দাস ওই মোবাইল ফোনটি গোপনে ব্যবহার এবং পার্থ মন্ডল ও সে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতো বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে উদ্ধারকৃত মোবাইলের কললিষ্ট অ্যানালাইসিস সহ তাতে পাওয়া প্রেমিক পার্থ মন্ডলের নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তসহ পার্থ মন্ডলকে গ্রেপ্তারের অভিযান শুরু করে পুলিশ। লাশটি উদ্ধারকালে নিহত পূর্নিমা দাসের মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যৌন নির্যাতন এবং গলায় শ্বাসরোধের সুষ্পষ্ট চিহ্নও দেখা যায়। যা থেকে পূর্নিমাকে ধর্ষণের একপর্যায়ে রক্তপাত শুরু কিংবা সে চিৎকার চেচামেচি করলে পার্থ মন্ডল শ্বাসরোধ করে পূর্নিমাকে হত্যা করে ফেলে রেখে আত্মগোপন করে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের পর প্রেমিক পার্থকে একমাত্র আসামী করে নিহতের বাবা মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।